পাতা:গীতবিতান.djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূজা
৭৯

সেই চির-আনন্দ, বিমল চিরসুধা,
যুগে যুগে কত নব নব লোকে নিয়তশরণ।
পরাশান্তি, পরমপ্রেম, পরামুক্তি, পরমক্ষেম,
সেই অন্তরতম চিরসুন্দর প্রভু, চিত্তসখা,
ধর্ম-অর্থ-কাম-ভরণ রাজা হৃদয়হরণ।

১৭৩

আমার মন তুমি, নাথ, লবে হ’রে
আমি আছি বসে সেই আশা ধরে।
নীলাকাশে ওই তারা ভাসে, নীরব নিশীথে শশী হাসে,
আমার দু নয়নে বারি আসে ভরে— আছি আশা ধরে।
স্থলে জলে তব ধূলিতলে, তরুলতা তব ফুলে ফলে,
নরনারীদের প্রেমডোরে,
নানা দিকে দিকে নানা কালে, নানা সুরে সুরে নানা তালে
নানা মতে তুমি লবে মোরে— আছি আশা ধরে।

১৭৪

ঘাটে বসে আছি আনমনা যেতেছে বহিয়া সুসময়—
সে বাতাসে তরী ভাসাব না যাহা তোমা-পানে নাহি বয়।
দিন যায় ওগো দিন যায়, দিনমণি যায় অস্তে—
নিশার তিমিরে দশ দিক ঘিরে জাগিয়া উঠিছে শত ভয়।
ঘরের ঠিকানা হল না গো, মন করে তবু যাই-যাই—
ধ্রুবতারা তুমি যেথা জাগ সে দিকের পথ চিনি নাই।
এত দিন তরী বাহিলাম যে সুদূর পথ বাহিয়া—
শত বার তরী ডুবুডুবু করি সে পথে ভরসা নাহি পাই।
তীর-সাথে হেরো শত ডোরে বাঁধা আছে মোর তরীখান—
রশি খুলে দেবে কবে মোরে, ভাসিতে পারিলে বাঁচে প্রাণ।
কবে অকূলের খোলা হাওয়া দিবে সব জ্বালা জুড়ায়ে,
শুনা যাবে কবে ঘনঘোর রবে মহাসাগরের কলগান।