পাতা:গীতবিতান.djvu/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূজা
১৪৫

তিনি যখন ভিক্ষা নিতে আসেন আমার দ্বারে
বন্ধ তালা ভেঙে দেখি আপন-মাঝে গোপন রতনভার,
হারায় না সে আর॥
প্রভাত আসে তাঁহার কাছে আলোক ভিক্ষা নিতে,
সে আলো তার লুটায় ধরণীতে।
তিনি যখন সন্ধ্যা-কাছে দাঁড়ান ঊর্ধ্ব করে, তখন স্তরে স্তরে
ফুটে ওঠে অন্ধকারের আপন প্রাণের ধন—
মুকুটে তাঁর পরেন সে রতন॥

৩৫০

আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে তোমারি নাম সকল তারার মাঝে॥
সে নামখানি নেমে এল ভুঁয়ে, কখন আমার ললাট দিল ছুঁয়ে,
শান্তিধারায় বেদন গেল ধুয়ে—আপন আমার আপনি মরে লাজে॥
মন মিলে যায় আজ ওই নীরব রাতে তারায়-ভরা ওই গগনের সাথে।
অমনি করে আমার এ হৃদয় তোমার নামে হোক-না নামময়,
আঁধারে মোর তোমার আলোর জয় গভীর হয়ে থাক্‌ জীবনের কাজে॥

৩৫১

অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক
তখন আমি ছিলেম শয়ন পাতি।
বিশ্ব তখন তারার আলোয় দাঁড়ায়ে নির্বাক,
ধরায় তখন তিমিরগহন রাতি।
ঘরের লোকে কেঁদে কইল মোরে,
‘আঁধারে পথ চিনবে কেমন ক’রে?’
আমি কইনু, ‘চলব আমি নিজের আলো ধরে,
হাতে আমার এই-যে আছে বাতি।’
বাতি যতই উচ্চ শিখায় জ্বলে আপন তেজে
চোখে ততই লাগে আলোর বাধা,
ছায়ার মিশে চারি দিকে মায়া ছড়ায় সে-যে—