পাতা:গীতবিতান.djvu/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুজা
২৩১

৫৮৭

মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে
আবার ব্যথার টানে নিকটে ফিরাবে ব’লে॥
আঁধার-আলোর পারে খেয়া দিই বারে বারে,
নিজেরে হারায়ে খুঁজি— দুলি সেই দোলে দোলে॥
সকল রাগিণী বুঝি বাজাবে আমার প্রাণে—
কভু ভয়ে কতু জয়ে, কভু অপমানে মানে।
বিরহে ভরিবে সুরে তাই রেখে দাও দূরে,
মিলনে বাজিবে বাঁশি তাই টেনে আন কোলে॥

৫৮৮

রজনীর শেষ তারা, গোপনে আঁধারে আধো-ঘুমে
বাণী তব রেখে যাও প্রভাতের প্রথম কুসুমে॥
সেইমত যিনি এই জীবনের আনন্দরূপিণী
শেষক্ষণে দেন যেন তিনি নবজীবনের মুখ চুমে॥
এই নিশীথের স্বপ্নরাজি
নবজাগরণক্ষণে নব গানে উঠে যেন বাজি।
বিরহিণী যে ছিল রে মোর হৃদয়ের মর্ম-মাঝে
বধূবেশে সেই যেন সাজে নবদিনে চন্দনে কুঙ্কুমে॥

৫৮৯

কোন্ খেলা যে খেলব কখন ভাবি বসে সেই কথাটাই—
তোমার আপন খেলার সাথি করো, তা হলে আর ভাবনা তো নাই॥
শিশির-ভেজা সকালবেলা আজ কি তোমার ছুটির খেলা—
বর্ষণহীন মেঘের মেলা তার সনে মোর মনকে ভাসাই॥
তোমার নিঠুর খেলা খেলবে যে দিন বাজবে সে দিন ভীষণ ভেরী—
ঘনাবে মেঘ, আঁধার হবে, কাঁদবে হাওয়া আকাশ ঘেরি।
সে দিন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে—
অকাতরে পরানটাকে প্রলয়দোলায় দোলাতে চাই॥