পাতা:গীতবিতান.djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০০
প্রেম

সমুখ-পানে বালুতটের তলে  শীর্ণ নদী শ্রান্তধারায় চলে,
বেণুচ্ছায়া তোমার চেলাঞ্চলে  উঠিছে স্পন্দিয়া।
মগ্ন তোমার স্নিগ্ধ নয়ন দুটি  ছায়ায় ছন্ন অরণ্য-অঙ্গনে,
প্রজাপতির দল যেখানে জুটি  রঙ ছড়ালো প্রফুল্ল রঙ্গনে।
তপ্ত হাওয়ায় শিথিলমঞ্জরী গোলকচাঁপা একটি দুটি করি
পায়ের কাছে পড়ছে ঝরি ঝরি  তোমারে নন্দিয়া।
ঘাটের ধারে কম্পিত ঝাউশাখে  দোয়েল দোলে সঙ্গীতে চঞ্চলি,
আকাশ ঢালে পাতার ফাঁকে ফাঁকে তোমার কোলে সুবর্ণ-অঞ্জলি।
বনের পথে কে যায় চলি দূরে— বাঁশির ব্যথা পিছন-ফেরা সুরে
তোমায় ঘিরে হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে  ফিরিছে ক্রন্দিয়া।


৭০

কেটেছে একেলা বিরহের বেলা আকাশকুমচয়নে।
সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার দুখানি নয়নে।
দেখিতে দেখিতে নূতন আলোকে  কে দিল রচিয়া ধ্যানের পুলকে
নূতন ভুবন নূতন দ্যুলোকে মোদের মিলিত নয়নে।
বাহির-আকাশে মেঘ ঘিরে আসে, এল সব তারা ঢাকিতে।
হারানো সে আলো আসন বিছালো শুধু দুজনের আঁখিতে।
ভাষাহারা মম বিজন রোদনা  প্রকাশের লাগি করেছে সাধনা,
চিরজীবনেরই বাণীর বেদনা মিটিল দোঁহার নয়নে।


৭১

দে পড়ে দে আমায় তোরা কী কথা আজ লিখেছে সে।
তার  দূরের বাণীর পরশমানিক লাগুক আমার প্রাণে এসে।
শস্যখেতের গন্ধখানি  একলা ঘরে দিক সে আনি,
ক্লান্তগমন পান্থহাওয়া লাগুক আমার মুক্ত কেশে।
নীল আকাশের সুরটি নিয়ে বাজাক আমার বিজন মনে,
ধূসর পথের উদাস বরন মেলুক আমার বাতায়নে।
সূর্য ডোবার রাঙা বেলায়  ছড়াব প্রাণ রঙের খেলায়
আপন মনে চোখের কোণে অশ্রু-বাতাস উঠবে ভেসে।