আমি সেতারেতে তার বেঁধেছি, আমি সুরলোকের সুর সেধেছি,
তারি তানে তানে মনে প্রাণে মিলিয়ে গলা গাও কি—
হায় আসরেতে বুঝি এলে না।
ডাক উঠেছে বারে বারে, তুমি সাড়া দাও কি!
আজ ঝুলনদিনে দোলন লাগে, তোমার পরান হেলে না॥
১১১
তােমার মনের একটি কথা আমায় বলো বলো।
তােমার নয়ন কেন এমন ছলােছলো॥
বনের’ পরে বৃষ্টি ঝরে ঝরােঝরাে রবে।
সন্ধ্যা মুখরিত ঝিল্লিস্বরে নীপকুঞ্জতলে।
শালের বীথিকায় বারি বহে যায় কলােকলাে॥
আজি দিগন্তসীমা।
বৃষ্টি-আড়ালে হারালাে নীলিমা হারালাে—
ছায়া পড়ে তােমার মুখের ’পরে,
ছায়া ঘনায় তব মনে মনে ক্ষণে ক্ষণে,
অশ্রুমন্থর বাতাসে বাতাসে তােমার হৃদয় টলােটলো॥
১১২
উদাসিনী-বেশে বিদেশিনী কে সে নাইবা তাহারে জানি,
রঙে রঙে লিখা আঁকি মরীচিকা মনে মনে ছবিখানি॥
পুবের হাওয়ায় তরীখানি তার এই ভাঙা ঘাট কবে হল পার
দূর নীলিমার বক্ষে তাহার উদ্ধত বেগ হানি॥
মুগ্ধ আলসে গণি একা বসে পলাতকা যত ঢেউ।
যারা চলে যায় ফেরে না তাে হায় পিছু-পানে আর কেউ।
মনে জানি কারাে নাগাল পাব না— তবু যদি মাের উদাসী ভাবনা
কোনাে বাসা পায় সেই দুরাশায় গাঁথি সাহানায় বাণী॥