পাতা:গীতবিতান.djvu/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রেম
৩৮১

২৭৪

আমার  ভুবন তো আজ হল কাঙাল, কিছু তো নাই বাকি,
ওগো নিঠুর, দেখতে পেলে তা কি।
তার  সব ঝরেছে, সব মরেছে, জীর্ণ বসন ওই পরেছে—
প্রেমের দানে নগ্ন প্রাণের লজ্জা দেহো ঢাকি।
কুঞ্জে তাহার গান যা ছিল কোথায় গেল ভাসি।
এবার তাহার শূন্য হিয়ায় বাজাও তোমার বাঁশি।
তার  দীপের আলো কে নিভালো,  তারে তুমি জ্বালো জ্বালো—
আমার আপন আঁধার আমার আঁখিরে দেয় ফাঁকি।


২৭৫

যখন  এসেছিলে অন্ধকারে
চাঁদ ওঠে নি সিন্ধুপারে।
হে অজানা, তোমায় তবে  জেনেছিলেম অনুভবে—
গানে তোমার পরশখানি বেজেছিল প্রাণের তারে।
তুমি  গেলে যখন একলা চলে
চাঁদ উঠেছে রাতের কোলে।
তখন দেখি, পথের কাছে  মালা তোমার পড়ে আছে—
বুঝেছিলেম অনুমানে এ কণ্ঠহার দিলে কারে।


২৭৬

এ পথে আমি-যে গেছি বার বার, ভুলি নি তো এক দিনও।
আজ কি ঘুচিল চিহ্ন তাহার, উঠিল বনের তৃণ।
তবু মনে মনে জানি নাই ভয়,  অনুকূল বায়ু সহসা যে বয়—
চিনিব তোমায় আসিবে সময়,  তুমি যে আমায় চিন।
একেলা যেতাম যে প্রদীপ হাতে নিবেছে তাহার শিখা।
তবু জানি মনে তার ভাষাতে ঠিকানা রয়েছে লিখা।
পথের ধারেতে ফুটিল যে ফুল  জানি জানি তারা ভেঙে দেবে ভুল—
গন্ধে তাদের গোপন মৃদুল  সঙ্কেত আছে লীন।