পাতা:গীতবিতান.djvu/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯০
প্রেম

২৯৯

কে উঠে ডাকি মম  বক্ষোনীড়ে থাকি
করুণ মধুর অধীর তানে  বিরহবিধুর পাখি।
নিবিড় ছায়া গহন মায়া,  পল্লবঘন নির্জন বন—
শান্ত পবনে কুঞ্জভবনে কে জাগে একাকী।
যামিনী বিভোরা  নিদ্রাঘনঘোরা—
ঘন তমালশাখা  নিদ্রাঞ্জন-মাখা।
স্তিমিত তারা চেতনহারা, পাণ্ডু গগন তন্দ্রামগন
চন্দ্র শ্রান্ত দিকভ্রান্ত  নিদ্রালস-আঁখি।


৩০০

ওগো  কে যায় বাঁশরি বাজায়ে  আমার ঘরে কেহ নাই যে
তারে  মনে পড়ে যারে চাই যে।
তার আকুল পরান, বিরহের গান,  বাঁশি বুঝি গেল জানায়ে।
আমি আমার কথা তারে জানাব কী করে,  প্রাণ কাঁদে মোর তাই যে।
কুসুমের মালা গাঁথা হল না,  ধুলিতে প’ড়ে শুকায় রে।
নিশি হয় ভোর, রজনীর চাঁদ  মলিন মুখ লুকায় রে।
সারা বিভাবরী কার পূজা করি  যৌবনডালা সাজায়ে—
বশিস্বরে হায় প্রাণ নিয়ে যায়,  আমি কেন থাকি হায় রে।


৩০১

হেলাফেলা সারা বেলা  একি খেলা আপন-সনে।
এই বাতাসে ফুলের বাসে  মুখখানি কার পড়ে মনে।
আঁখির কাছে বেড়ায় ভাসি  কে জানে গো কাহার হাসি,
দুটি ফোঁটা নয়নসলিল  রেখে যায় এই নয়নকোণে।
কোন্ ছায়াতে কোন্ উদাসী  দূরে বাজায় অলস বাঁশি,
মনে হয় কার মনের বেদন  কেঁদে বেড়ায় বাঁশির গানে।
সারা দিন গাঁথি গান  কারে চাহে, গাহে প্রাণ—
তরুতলে ছায়ার মতন বসে আছি ফুলবনে।