পাতা:গীতবিতান.djvu/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রেম
৩৯১

৩০২

ওগো  এত প্রেম-আশা, প্রাণের তিয়াষা  কেমনে আছে সে পাশরি।
তবে  সেথা কি হাসে না চাঁদিনী যামিনী,  সেথা কি বাজে না বাঁশরি।
সখী, হেথা সমীরণ লুটে ফুলবন, সেথা কি পবন বহে না।
সে যে  তার কথা মোরে কহে অনুক্ষণ, মোর কথা তারে কহে না!
যদি  আমারে আজি সে ভুলিবে সজনী, আমারে ভুলালে কেন সে।
ওগো  এ চিরজীবন করিব রোদন, এই ছিল তার মানসে!
যবে  কুসুমশয়নে নয়নে নয়নে  কেটেছিল সুখরাতি রে,
তবে  কে জানিত তার বিরহ আমার  হবে জীবনের সাথি রে।
যদি  মনে নাহি রাখে, মুখে যদি থাকে,  তোরা একবার দেখে আয়—
এই  নয়নের তৃষা, পরানের আশা,  চরণের তলে রেখে আয়।
আর  নিয়ে যা রাধার বিরহের ভার,  কত আর ঢেকে রাখি বল্।
আর  পারিস যদি তো আনিস হরিয়ে  এক-ফোঁটা তার আঁখিজল।
না না,  এত প্রেম, সখী, ভুলিতে যে পারে  তারে আর কেহ সেধো না।
আমি  কথা নাহি কব, দুখ লয়ে রব,  মনে মনে স’ব বেদনা।
ওগো  মিছে মিছে, সখী, মিছে এই প্রেম,  মিছে পরানের বাসনা।
ওগো  সুখদিন হায় যবে চলে যায়  আর ফিরে আর আসে না।


৩০৩

আমি  নিশি নিশি কত রচিব শয়ন  আকুলনয়ন রে।
কত নিতি নিতি বনে করিব যতনে  কুসুমচয়ন রে।
কত  শারদ যামিনী হইবে বিফল,  বসন্ত যাবে চলিয়া।
কত  উদিবে তপন, আশায় স্বপন  প্রভাতে যাইবে ছলিয়া।
এই  যৌবন কত রাখিব বাঁধিয়া,  মরিব কঁদিয়া রে।
সেই  চরণ পাইলে মরণ মাগিব  সাধিয়া সাধিয়া রে।
আমি  কার পথ চাহি এ জনম বাহি,  কার দরশন যাচি রে।
যেন  আসিবে বলিয়া কে গেছে চলিয়া,  তাই আমি বসে আছি রে!
তাই  মালাটি গাঁথিয়া পরেছি মাথায়,  নীলবাসে তনু ঢাকিয়া।
তাই  বিজন আলয়ে প্রদীপ জ্বালায়ে  একেলা রয়েছি জাগিয়া।