পাতা:গীতবিতান.djvu/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩০
প্রকৃতি

কত যে তুমি মনোহর মনই তাহা জানে,
হৃদয় মম থরোথরো কাঁপে তোমার গানে।
আজিকে এই প্রভাতবেলা  মেঘের সাথে রোদের খেলা,
জলে নয়ন ভরোভরো চাহি তোমার পানে।
আলোর অধীর ঝিলিমিলি নদীর ঢেউয়ে ওঠে,
বনের হাসি খিলিখিলি পাতায় পাতায় ছোটে।
আকাশে ওই দেখি কী যে—  তোমার চোখের চাহনি যে।
সুনীল সুধা ঝরোঝরো ঝরে আমার প্রাণে।

আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।
অসীম কালের যে হিল্লোলে  জোয়ার-ভাঁটায় ভুবন দোলে
নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।
ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে,
ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে,
ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।
কান পেতেছি, চোখ মেলেছি,  ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।

ব্যাকুল বকুলের ফুলে  ভ্রমর মরে পথ ভুলে।
আকাশে কী গোপন বাণী  বাতাসে করে কানাকানি,
বনের অঞ্চলখানি  পুলকে উঠে দুলে দুলে।