৩৭
বাদল-মেঘে মাদল বাজে গুরুগুরু গগন-মাঝে।
তারি গভীর রোলে আমার হৃদয় দোলে,
আপন সুরে আপনি ভোলে।
কোথায় ছিল গহন প্রাণে গোপন ব্যথা গোপন গানে—
আজি সজল বায়ে শ্যামল বনের ছায়ে
ছড়িয়ে গেল সকলখানে গানে গানে।
৩৮
ওগো আমার শ্রাবণমেঘের খেয়াতরীর মাঝি,
অশ্রুভরা পুরব হাওয়ায় পাল তুলে দাও আজি।
উদাস হৃদয় তাকায়ে রয়, বোঝা তাহার নয় ভারী নয়,
পুলক-লাগা এই কদম্বের একটি কেবল সাজি।
ভোরবেলা যে খেলার সাথি ছিল আমার কাছে,
মনে ভাবি, তার ঠিকানা তোমার জানা আছে।
তাই তোমারি সারিগানে সেই আঁখি তার মনে আনে,
আকাশ-ভরা বেদনাতে রোদন উঠে বাজি।
৩৯
তিমির-অবগুণ্ঠনে বদন তব ঢাকি
কে তুমি মম অঙ্গনে দাঁড়ালে একাকী।
আজি সঘন শর্বরী, মেঘমগন তারা,
নদীর জলে ঝর্ঝরি ঝরিছে জলধারা,
তমালবন মর্মরি পবন চলে হাঁকি।
যে কথা মম অন্তরে আনিছ তুমি টানি
জানি না কোন্ মন্তরে তাহারে দিব বাণী।
রয়েছি বাঁধা বন্ধনে, ছিঁড়িব, যাব বাটে—
যেন এ বৃথা ক্রন্দনে এ নিশি নাহি কাটে।
কঠিন বাধা-লঙ্ঘনে দিব না আমি ফাঁকি।