সেথায় বিজন সাগরকূলে
শ্রাবণ ঘনায় শৈলমূলে।
রাজার পুরে তমালগাছে নূপুর শুনে ময়ূর নাচে রে
সুদূর তেপান্তরের শেষে।
৭৫
ভোর হল যেই শ্রাবণশর্বরী
তোমার বেড়ায় উঠল ফুটে হেনার মঞ্জরী।
গন্ধ তারি রহি রহি বাদল-বাতাস আনে বহি,
আমার মনের কোণে কোণে বেড়ায় সঞ্চরি।
বেড়া দিলে কবে তুমি তোমার ফুলবাগানে—
আড়াল ক’রে রেখেছিলে আমার বনের পানে।
কখন গোপন অন্ধকারে বর্ষারাতের অশ্রুধারে
তোমার আড়াল মধুর হয়ে তাকে মর্মরি।
৭৬
বৃষ্টিশেষের হাওয়া কিসের খোঁজে বইছে ধীরে ধীরে।
গুঞ্জরিয়া কেন বেড়ায় ও যে বুকের শিরে শিরে।
অলখ তারে বাঁধা অচিন বীণা ধরার বক্ষে বহে নিত্য লীনা— এই হাওয়া
কত যুগের কত মনের কথা বাজায় ফিরে ফিরে।
ঋতুর পরে ঋতু ফিরে আসে বসুন্ধরার কূলে
চিহ্ন পড়ে বনের ঘাসে ঘাসে ফুলের পরে ফুলে।
গানের পরে গানে তারি সাথে কত সুরের কত যে হার গাঁথে— এই হাওয়া
ধরার কণ্ঠ বাণীর বরণমালায় সাজায় ঘিরে ঘিরে।
৭৭
বাদল-ধারা হল সারা, বাজে বিদায়-র।
গানের পালা শেষ ক’রে দে রে, যাবি অনেক দূর।
ছাড়ল খেয়া ও পার হতে ভাদ্রদিনের ভরা স্রোতে রে,
দুলছে তরী নদীর পথে তরঙ্গবন্ধুর।