১১২
আঁধার অম্বরে প্রচণ্ড ডম্বরু বাজিল গম্ভীর গরজনে।
অশত্থপল্লবে অশান্ত হিল্লোল সমীরচঞ্চল দিগঙ্গনে॥
নদীর কল্লোল, বনের মর্মর, বাদল-উচ্ছল নির্ঝরঝর্ঝর,
ধ্বনি তরঙ্গিল নিবিড় সঙ্গীতে— শ্রাবণসন্ন্যাসী রচিল রাগিণী॥
কদম্বকুঞ্জের সুগন্ধমদিরা অজস্র লুটিছে দুরন্ত ঝটিকা।
তড়িৎশিখা ছুটে দিগন্ত সন্ধিয়া, ভয়ার্ত যামিনী উঠিছে ক্রন্দিয়া—
নাচিছে যেন কোন্ প্রমত্ত দানব মেঘের দুর্গের দুয়ার হানিয়া॥
১১৩
হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতাে নাচে রে।
শত বরনের ভাব-উচ্ছ্বাস কলাপের মতাে করেছে বিকাশ,
আকুল পরান আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে॥
ওগাে, নির্জনে বকুলশাখায় দোলায় কে আজি দুলিছে, দোদুল দুলিছে॥
ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল, আঁচল আকাশে হতেছে আকুল,
উড়িয়া অলক ঢাকিছে পলক— কবরী খসিয়া খুলিছে।
ঝরে ঘনধারা নবপল্লবে, কাঁপিছে কানন ঝিল্লির রবে—
তীর ছাপি নদী কলকল্লোলে এল পল্লির কাছে রে॥
১১৪
আজ বরষার রূপ হেরি মানবের মাঝে—
চলেছে গরজি, চলেছে নিবিড় সাজে॥
হৃদয়ে তাহার নাচিয়া উঠিছে ভীমা,
ধাইতে খাইতে লােপ ক'রে চলে সীমা,
কোন্ তাড়নায় মেঘের সহিত মেঘে
বক্ষে বক্ষে মিলিয়া বজ্র বাজে॥
পুঞ্জে পুঞ্জে দূরে সুদূরের পানে
দলে দলে চলে, কেন চলে নাহি জানে।