শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে
বনের-পথে-লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।
মানিক-গাঁথা ওই-যে তোমার কঙ্কণে
ঝিলিক লাগায় তোমার শ্যামল অঙ্গনে।
কুঞ্জছায়া গুঞ্জরণের সঙ্গীতে
ওড়না ওড়ায় একি নাচের ভঙ্গীতে,
শিউলিবনের বুক যে ওঠে আন্দোলি।
১৫৪
তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে।
আমার যায় বেলা, বয়ে যায় বেলা কেমন বিনা কারণে।
এই পাগল হাওয়া কী গান গাওয়া
ছড়িয়ে দিয়ে গেল আজি সুনীল গগনে।
সে গান আমার লাগল যে গো লাগল মনে,
আমি কিসের মধু খুঁজে বেড়াই ভ্রমরগুঞ্জনে।
ওই আকাশ-ছাওয়া কাহার চাওয়া
এমন ক’রে লাগে আজি আমার নয়নে
১৫৫
কোন্ খেপা শ্রাবণ ছুটে এল আশ্বিনেরই আঙিনায়।
দুলিয়ে জটা ঘনঘটা পাগল হাওয়ার গান সে গায়।
মাঠে মাঠে পুলক লাগে ছায়ানটের নৃত্যরাগে,
শরৎ-রবির সোনার আলো উদাস হয়ে মিলিয়ে যায়।
কী কথা সে বলতে এল ভরা ক্ষেতের কানে কানে
লুটিয়ে-পড়া কিসের কাঁদন উঠেছে আজ নবীন ধানে।
মেঘে অধীর আকাশ কেন ডানা-মেলা গরুড় যেন—
পথ-ভোলা এক পথিক এসে পথের বেদন আনল ধরায়।