কভু কাষ্ঠলোষ্ট্র-ইষ্টক দৃঢ় ঘনপিনদ্ধ কায়া,
কভু ভূতল-জল-অন্তরীক্ষ-লঙ্ঘন লঘু মায়া।
তব খনি-খনিত্র-নখ-বিদীর্ণ ক্ষিতি বিকীর্ণ-অস্ত্র।
তব পঞ্চভূতবন্ধনকর ইন্দ্রজালতন্ত্র।
৮০
ওগো নদী, আপন বেগে পাগল-পারা,
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা।
আমি সদা অচল থাকি, গভীর চলা গোপন রাখি,
আমার চলা নবীন পাতায়, আমার চলা ফুলের ধারা।
ওগো নদী, চলার বেগে পাগল-পারা,
পথে পথে বাহির হয়ে আপন-হারা—
আমার চলা যায় না বলা— আলোর পানে প্রাণের চলা—
আকাশ বোঝে আনন্দ তার, বোঝে নিশার নীরব তারা।
৮১
প্রাঙ্গণে মোর শিরীষশাখায় ফাগুন মাসে
কী উচ্ছ্বাসে
ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা।
ক্ষান্তকূজন শান্তবিজন সন্ধ্যাবেলা
প্রত্যহ সেই ফুল্ল শিরীষ প্রশ্ন শুধায় আমায় দেখি
‘এসেছে কি– এসেছে কি।’
আর বছরেই এমনি দিনেই ফাগুন মাসে
কী উচ্ছ্বাসে
নাচের মাতন লাগল শিরীষ-ডালে
স্বর্গপুরের কোন্ নূপুরের তালে।
প্রত্যহ সেই চঞ্চল প্রাণ শুধিয়েছিল, ‘শুনাও দেখি
আসে নি কি— আসে নি কি।’