পাতা:গীতবিতান.djvu/৭২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিত্র
৬০১

যদি  অমনিতে হাল ছাড়ি  মরি সেই লাজেই।
আপন হাতের জোরে  আমরা  তুলি সৃজন ক’রে,
আমরা  প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধি,  থাকি তার মাঝেই।

১২৯

কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন,  ও তার  ঘুম ভাঙাইনু রে।
লক্ষ যুগের অন্ধকারে ছিল সঙ্গোপন,  ওগো,  তায় জাগাইনু রে।
পোষ মেনেছে হাতের তলে  যা বলাই সে তেমনি বলে—
দীর্ঘ দিনের মৌন তাহার আজ ভাগাইনু রে।
অচল ছিল, সচল হয়ে  ছুটেছে ওই জগৎ-জয়ে—
নির্ভয়ে আর দুই হাতে তার রাশ বাগাইনু রে।

১৩০

আমরা  চাষ করি আনন্দে।
মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে।
রৌদ্র ওঠে, বৃষ্টি পড়ে,  বাঁশের বনে পাতা নড়ে,
বাতাস ওঠে ভরে ভরে চষা মাটির গন্ধে।
সবুজ প্রাণের গানের লেখা  রেখায় রেখায় দেয় রে দেখা,
মাতে রে কোন্ তরুণ কবি নৃত্যদোহুল ছন্দে।
ধানের শিষে পুলক ছোটে—  সকল ধরা হেসে ওঠে
অঘ্রানেরই সোনার রোদে, পূর্ণিমারই চন্দ্রে।

১৩১

তোমরা হাসিয়া বহিয়া চলিয়া যাও  কুলুকুলুকল নদীর সোতের মতো।
আমরা তীরেতে দাঁড়ায়ে চাহিয়া থাকি,  মরমে গুমরি মরিছে কামনা কত।
আপনা-আপনি কানাকানি কর সুখে,  কৌতুকছটা উছলিছে চোখে মুখে,
কমলচরণ পড়িছে ধরণী-মাঝে,  কনকনূপুর রিনিকি ঝিনিকি বাজে।

অঙ্গে অঙ্গ বাঁধিছ রঙ্গপাশে,  বাহতে বাহুতে জড়িত ললিত লতা।
ইঙ্গিতরসে ধ্বনিয়া উঠিছে হাসি,  নয়নে নয়নে বহিছে গোপন কথা।