পাতা:গীতবিতান.djvu/৮৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬৮
নাট্যগীতি

তুমি গো লাবণ্যলতা, মূর্তি-মধুরিমা।
বসন্তের বনবালা  অতুল রূপের ডালা,
মায়ার মোহিনী মেয়ে ভাবের আধার—
ঘুচাও মনের মোর সকল আঁধার।
অদর্শন হলে তুমি  ত্যেজি লোকালয়ভুমি
অভাগা বেড়াবে কেঁদে গহনে গহনে।
হেরে মোরে তরুলতা  বিষাদে কবে না কথা,
বিষণ্ন কুসুমকুল বনফুলবনে।
‘হা দেবী’ ‘হা দেবী’ বলি গুঞ্জরি কাঁদিবে অলি,
ঝরিবে ফুলের চোখে শিশির-আসার—
হেরিব জগত শুধু আঁধার— আঁধার।

নীরব রজনী দেখো মগ্ন জোছনায়।
ধীরে ধীরে, অতি ধীরে, অতি ধীরে গাও গো।
ঘুমঘোরময় গান বিভাবরী গায়—
রজনীর কণ্ঠ-সাথে সুকণ্ঠ মিলাও গো।
নিশার কুহকবলে  নীরবতাসিন্ধুতলে
মগ্ন হয়ে ঘুমাইছে বিশ্বচরাচর—
প্রশান্ত সাগরে হেন   তরঙ্গ না তুলে যেন
অধীর উচ্ছ্বাসময় সঙ্গীতের স্বর।
তটিনী কী শান্ত আছে—  ঘুমাইয়া পড়িয়াছে
বাতাসের মৃদুহস্ত-পরশে এমনি
ভুলে যদি ঘুমে ঘুমে  তটের চরণ চুমে
সে চুম্বনধ্বনি শুনে চমকে আপনি।
তাই বলি, অতি ধীরে,  অতি ধীরে গাও গো—
রজনীর কণ্ঠ-সাথে সুকণ্ঠ মিলাও গো।