২০
বসন্তপ্রভাতে এক মালতীর ফুল
প্রথম মেলিল আঁখি তার, চাহিয়া দেখিল চারি ধার।
উষারানী দাঁড়াইয়া শিয়রে তাহার
দেখিছে ফুলের ঘুম-ভাঙা। হরষে কপোল তার রাঙা।
মধুকর গান গেয়ে বলে, ‘মধু কই। মধু দাও দাও।’
হরষে হৃদয় ফেটে গিয়ে ফুল বলে, ‘এই লও লও।’
বায়ু আসি কহে কানে কানে, ‘ফুলবালা, পরিমল দাও।’
আনন্দে কাঁদিয়া কহে ফুল, ‘যাহা আছে সব লয়ে যাও।’
হরষ ধরে না তার চিতে, আপনারে চাহে বিলাইতে,
বালিকা আনন্দে কুটি-কুটি পাতায় পাতায় পড়ে লুটি।
২১
তরুতলে ছিন্নবৃন্ত মালতী ফুল—
মুদিয়া আসিছে আঁখি তার, চাহিয়া দেখিল চারি ধার।
শুষ্ক তৃণরাশি-মাঝে একেলা পড়িয়া,
চারি দিকে কেহ নাই আর— নিরদয় অসীম সংসার।
কে আছে গো দিবে তার তৃষিত অধরে
একবিন্দু শিশিরের কণা— কেহ না, কেহ না।
মধুকর কাছে এসে বলে, ‘মধু কই। মধু চাই, চাই।’
ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলিয়া ফুল বলে, কিছু নাই, নাই।
‘ফুলবালা, পরিমল দাও’ বায়ু আসি কহিতেছে কাছে।
মলিন বদন ফিরাইয়া ফুল বলে, ‘আর কী বা আছে।’
মধ্যাহ্নকিরণ চারি দিকে খরদৃষ্টে চেয়ে অনিমিখে—
ফুলটির মৃদু প্রাণ হায়,
ধীরে ধীরে শুকাইয়া যায়।