১১৩
নমো নামো শচীচিতরঞ্জন, সন্তাপভঞ্জন—
নবজলধরকান্তি, ঘননীল-অঞ্জন— নমো হে, নমো নমো।
নন্দনবীথির ছায়ে তব পদপাতে নব পারিজাতে
উড়ে পরিমল মধুরাতে— নমো হে, নমো নমো।
তোমার কটাক্ষের ছন্দে মেনকার মঞ্জীরবন্ধে
জেগে ওঠে গুঞ্জন মধুকরগঞ্জন— নমো হে, নমো নমো।
১১৪
নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বন্ধু, সুন্দরী রূপসী হে নন্দনবাসিনী উর্বশী।
গোষ্ঠে যবে নামে সন্ধ্যা শ্রান্ত দেহে স্বর্ণাঞ্চল টানি
তুমি কোনো গৃহপ্রান্তে নাহি জ্বালো সন্ধ্যাদীপখানি।
দ্বিধায় জড়িত পদে কম্প্রবক্ষে নম্রনেত্রপাতে
স্মিতহাস্যে নাহি চল লজ্জিত বাসরশয্যাতে অর্ধরাতে।
উষার উদয়-সম অনবগুণ্ঠিতা তুমি অকুণ্ঠিতা।
সুরসভাতলে যবে নৃত্য করো পুলকে উল্লসি
হে বিলোল হিল্লোল উর্বশী,
ছন্দে নাচি উঠে সিন্ধুমাঝে তরঙ্গের দল,
শস্যশীর্ষে শিহরিয়া কাঁপি উঠে ধরার অঞ্চল,
তোমার মদির গন্ধ অন্ধ বায়ু বহে চারি ভিতে,
মধুমত্ত ভৃঙ্গ-সম মুগ্ধ কবি ফিরে লুব্ধ চিতে উদ্দাম গীতে।
নূপুর গুঞ্জরি চলো আকুল-অঞ্চলা বিদ্যুতচঞ্চলা।
১১৫
প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস—
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস—
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।