২
অয়ি বিষাদিনী বীণা, আয় সখী, গা লো সেই-সব পুরানো গান—
বহুদিনকার লুকানো স্বপনে ভরিয়া দে-না লো আঁধার প্রাণ।
হা রে হতবিধি, মনে পড়ে তোর সেই একদিন ছিল
আমি আর্যলক্ষ্মী এই হিমালয়ে এই বিনোদিনী বীণা করে লয়ে
যে গান গেয়েছি সে গান শুনিয়া জগত চমকি উঠিয়াছিল।
আমি অর্জুনেরে— আমি যুধিষ্ঠিরে করিয়াছি স্তনদান।
এই কোলে বসি বাল্মীকি করেছে পুণ্য রামায়ণ গান।
আজ অভাগিনী— আজ অনাথিনী
ভয়ে ভয়ে ভয়ে লুকায়ে লুকায়ে নীরবে নীরবে কাঁদি,
পাছে জননীর রোদন শুনিয়া একটি সন্তান উঠে রে জাগিয়া!
কাঁদিতেও কেহ দেয় না বিধি।
হায় রে বিধাতা, জানে না তাহারা সে দিন গিয়াছে চলি
যে দিন মুছিতে বিন্দু-অশ্রুধার কত-না করিত সন্তান আমার—
কত-না শোণিত দিত রে ঢালি।
৩
শোনো শোনো আমাদের ব্যথা দেবদেব, প্রভু, দয়াময়—
আমাদের ঝরিছে নয়ন, আমাদের ফাটিছে হৃদয়।
চিরদিন আঁধার না রয়- রবি উঠে, নিশি দূর হয়—
এ দেশের মাথার উপরে এ নিশীথ হবে না কি ক্ষয়।
চিরদিন ঝরিবে নয়ন? চিরদিন ফাটিবে হৃদয়?
মরমে লুকানো কত দুখ, ঢাকিয়া রয়েছি ম্লান মুখ—
কাঁদিবার নাই অবসর— কথা নাই, শুধু ফাটে বুক।
সঙ্কোচে ম্রিয়মাণ প্রাণ, দশ দিশি বিভীষিকাময়—
হেন হীন দীনহীন দেশে বুঝি তব হবে না আলয়।
চিরদিন ঝরিবে নয়ন, চিরদিন ফাটিবে হৃদয়।