পাতা:গীতবিতান.djvu/৯৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতীয় সংগীত
৮১৯

আসুক সহস্র বাধা, বাধুক প্রলয়,
আমরা সহস্র প্রাণ বহিব নির্ভয়—
বন্দে মাতরম্।
আমরা ডরাইব না ঝটিকা-ঝঞ্ঝায়,
অযুত তরঙ্গ বক্ষে সহিব-হেলায়।
টুটে তো টুটুক এই নশ্বর জীবন,
তবু না ছিঁড়িবে কভু এ দৃঢ় বন্ধন—
বন্দে মাতরম্।

তোমারি তরে, মা, সঁপিনু এ দেহ।  তোমারি তরে, মা, সঁপিনু প্রাণ।
তোমারি শোকে এ আঁখি বরষিবে,  এ বীণা তোমারি গাহিবে গান।
যদিও এ বাহু অক্ষম দুর্বল  তোমারি কার্য সাধিবে।
যদিও এ অসি কলঙ্কে মলিন  তোমারি পাশ নাশিবে।
যদিও, হে দেবী, শোণিতে আমার  কিছুই তোমার হবে না
তবু, ওগো মাতা পারি তা ঢালিতে  একতিল তব কলঙ্ক ক্ষালিতে—
নিভাতে তোমার যাতনা।
যদিও, জননী, যদিও আমার  এ বীণায় কিছু নাহিক বল
কী জানি যদি, মা, একটি সন্তান  জাগি উঠে শুনি এ বীণাতান।

তবু  পারি নে সঁপিতে প্রাণ।
পলে পলে মরি সেও ভালো, সহি  পদে পদে অপমান।
কথার বাঁধুনি, কাঁদুনির পালা— চোখে নাহি কারো নীর।
আবেদন আর নিবেদনের থালা  ব’হে ব’হে নত শির।
কাঁদিয়ে সোহাগ, ছি ছি একি লাজ!  জগতের মাঝে ভিখারির সাজ—
আপনি করি নে আপনার কাজ,  পরের ’পরে অভিমান।
আপনি নামাও কলঙ্কপশরা,  যেয়ো না পরের দ্বার—
পরের পায়ে ধ’রে মান ভিক্ষা করা  সকল ভিক্ষার ছার।