‘দাও দাও’ ব’লে পরের পিছু পিছু কাঁদিয়া বেড়ালে মেলে না তো কিছু—
মান পেতে চাও, প্রাণ পেতে চাও, প্রাণ আগে করো দান।
১০
কেন চেয়ে আছ, গো মা, মুখপানে।
এরা চাহে না তোমারে চাহে না যে, আপন মায়েরে নাহি জানে।
এরা তোমায় কিছু দেবে না, দেবে না— মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভাণে।
তুমি তো দিতেছ, মা, যা আছে তোমারি— স্বর্ণশস্য তব, জাহ্নবীবারি,
জ্ঞান ধর্ম কত পুণ্যকাহিনী।
এরা কী দেবে তোরে! কিছু না, কিছু না। মিথ্যা কবে শুধু হীনপরানে।
মনের বেদনা রাখো, মা, মনে। নয়নবারি নিবারো নয়নে।
মুখ লুকাও, মা, ধুলিশয়নে— ভুলে থাকো যত হীন সন্তানে।
শূন্য-পানে চেয়ে প্রহর গণি গণি দেখো কাটে কিনা দীর্ঘ রজনী।
দুঃখ জানায়ে কী হবে, জননী, নির্মম চেতনাহীন পাষাণে।
১১
একবার তোরা মা বলিয়া ডাক, জগতজনের শ্রবণ জুড়াক,
হিমাদ্রিপাষাণ কেঁদে গলে যাক— মুখ তুলে আজি চাহো রে।
দাঁড়া দেখি তোরা আত্মপর ভুলি, হৃদয়ে হৃদয়ে ছুটুক বিজুলি—
প্রভাতগগনে কোটি শির তুলি নির্ভয়ে আজি গাহো রে।
বিশ কোটি কণ্ঠে মা বলে ডাকিলে রোমাঞ্চ উঠিবে অনন্ত নিখিলে,
বিশ কোটি ছেলে মায়েরে ঘেরিলে দশ দিক সুখে হাসিবে।
সেদিন প্রভাতে নূতন তপন নূতন জীবন করিবে বপন
এ নহে কাহিনী, এ নহে স্বপন— আসিবে সে দিন আসিবে।
আপনার মায়ে মা ব’লে ডাকিলে, আপনার ভায়ে হৃদয়ে রাখিলে,
সব পাপ তাপ দূরে যায় চলে পুণ্য প্রেমের বাতাসে।
সেথায় বিরাজে দেব-আশীর্বাদ— না থাকে কলহ, না থাকে বিষাদ—
ঘুচে অপমান, জেগে ওঠে প্রাণ— বিমল প্রতিভা বিকাশে।