বাহিরের দীপ রবি তারা ঢালে না সেথায় করধারা—
তুমিই করিবে শুধু, দেব, সেথায় কিরণবরিষন।
দূরে বাসনা চপল, দূরে প্রমোদ-কোলাহল—
বিষয়ের মান-অভিমান করেছে সুদূরে পলায়ন।
কেবল আনন্দ বসি সেথা, মুখে নাই একটিও কথা—
তোমারি সে পুরোহিত, প্রভু, করিবে তোমারি আরাধন—
নীরবে বসিয়া অবিরল চরণে দিবে সে অশ্রুজল,
দুয়ারে জাগিয়া রবে একা মুদিয়া সজল দু’নয়ন।
৬
কোথা আছ, প্রভু, এসেছি দীনহীন,
আলয় নাহি মোর অসীম সংসারে!
অতি দূরে দূরে ভ্রমিছি আমি হে ‘প্রভু প্রভু’ ব’লে ডাকি কাতরে।
সাড়া কি দিবে না। দীনে কি চাবে না। রাখিবে ফেলিয়ে অকূল আঁধারে?
পথ যে জানি নে, রজনী আসিছে, একেলা আমি যে এ বনমাঝারে।
জগতজননী, লহো লহো কোলে, বিরাম মাগিছে শ্রান্ত শিশু এ।
পিয়াও অমৃত, তৃষিত সে অতি— জুড়াও তাহারে স্নেহ বরষিয়ে।
ত্যজি সে তোমারে গেছিল চলিয়ে, কাঁদিছে আজিকে পথ হারাইয়ে—
আর সে যাবে না, রহিবে সাথ-সাথ ধরিয়ে তব হাত ভ্রমিবে নির্ভয়ে।
এসো তবে, প্রভু, স্নেহনয়নে এ-মুখ-পানে চাও— ঘুচিবে যাতনা,
পাইব নব বল, মুছিব অশ্রুজল, চরণ ধরিয়ে পূরিবে কামনা।
৭
কী করিলি মোহের ছলনে।
গৃহ তেয়াগিয়া প্রবাসে ভ্রমিলি, পথ হারাইলি গহনে।
ওই সময় চলে গেল, আঁধার হয়ে এল, মেঘ ছাইল গগনে।
শ্রান্ত দেহ আর চলিতে চাহে না, বিঁধিছে কণ্টক চরণে।
গৃহে ফিরে যেতে প্রাণ কাঁদিছে, এখন ফিরিব কেমনে।