৭০
ওগো দেবতা আমার, পাষাণদেবতা, হৃদিমন্দিরবাসী,
তোমারি চরণে উজাড় করেছি সকল কুসুমরাশি।
প্রভাত আমার সন্ধ্যা হইল, অন্ধ হইল আঁখি।
এ পূজা কি তবে সবই বৃথা হবে। কেঁদে কি ফিরিবে দাসী।
এবার প্রাণের সকল বাসনা সাজায়ে এনেছি থালি।
আঁধার দেখিয়া আরতির তরে প্রদীপ এনেছি জ্বালি।
এ দীপ যখন নিবিবে তখন কী রবে পূজার তরে।
দুয়ার ধরিয়া দাঁড়ায়ে রহিব নয়নের জলে ভাসি।
৭১
গভীর রাতে ভক্তিভরে কে জাগে আজ, কে জাগে।
সপ্ত ভুবন আলো করে লক্ষ্মী আসেন, কে জাগে।
ষোলো কলায় পূর্ণ শশী, নিশার আঁধার গেছে খসি—
একলা ঘরের দুয়ার-’পরে কে জাগে আজ, কে জাগে।
ভরেছ কি ফুলের সাজি। পেতেছ কি আসন আজি।
সাজিয়ে অর্ঘ্য পূজার তরে কে জাগে আজ, কে জাগে।
আজ যদি রোস্ ঘুমে মগন চলে যাবে শুভলগন,
লক্ষ্মী এসে যাবেন স’রে— কে জাগে আজ, কে জাগে।
৭২
যাত্রী আমি ওরে,
পারবে না কেউ আমায় রাখতে ধরে।
দুঃখসুখের বাঁধন সবই মিছে, বাঁধা এ ঘর রইবে কোথায় পিছে,
বিষয়বোঝা টানে আমায় নীচে— ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে যাবে পড়ে।
যাত্রী আমি ওরে,
চলতে পথে গান গাহি প্রাণ ভ’রে।
দেহদুর্গে খুলবে সকল দ্বার, ছিন্ন হবে শিকল বাসনার,
ভালো মন্দ কাটিয়ে হব পার— চলতে রব লোকে লোকান্তরে।