টমি।
যখন অর্থের জন্য লালায়িত হইয়া বেড়াইয়াছি, তখন অর্থের মুখ দেখিতে পাই নাই, যখন অর্থের অভাবে সংসার মরুময় হইয়া গিয়াছে তখন অর্থ পাই নাই; কিন্তু যখন অর্থাভাব বোধ করিবার অবস্থা অতীত হইয়াছে তখন ভগবান অর্থ ঢালিয়া দিলেন। গৃহত্যাগ করিয়া অন্নাভাবে প্রথম উপার্জ্জন করিলাম। একজন কয়লার দালালের কেরাণী হইলাম। দেশে যখন কয়লার দুর্ভিক্ষ হইল তখন আমার মনিব চতুর্গুণ মূল্যে তাঁহার সঞ্চিত কয়লা ছাড়িতে আরম্ভ করিলেন। মনিব ক্রোরপতি হইলেন। তাঁহার প্রসাদে আমার অভাব ঘুচিল। ধনী হইয়া ভাবিলাম অর্থ লইয়া কি করিব? কে ভোগ করিবে? কাহার জন্য উপার্জ্জন করিলাম? ভোগ করিতে কেবল আমি আর টমি।
চাকরী ছাড়িয়া দেশ ভ্রমণে বাহির হইলাম, আমি আর টমি। উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। এইরূপে দিনের পর দিন কাটিয়া যাইতে লাগিল। গৃহের সংবাদ আমি মাঝে মাঝে পাইতাম। কিন্তু পিতা কখনও আমার সংবাদ লন নাই, একদিনও আমার সন্ধান করেন নাই। আমার আরও দুইটি ভাই ছিল, তাহারা বড় হইয়া উঠিল, তাহাদের বিবাহ হইল, পিতা বোধ হয় আমাকে বিস্তৃত হইলেন। তাহাতে এক দিনের তরেও মনে কোন কষ্ট অনুভব করি নাই। আমি ত মরিয়াছি—আমার আবার অভিমান কি?
পিতা দেহত্যাগ করিলেন, ভাই দুইটি লক্ষ লক্ষ মুদ্রার অধীশ্বর হইল। যে পিতা আমার শিক্ষার জন্য সর্ব্বস্বাস্ত হইয়াছিলেন, যাঁহার এমন অর্থ ছিল না যে পুত্রকে কিছুদিন কলিকাতায় রাখিয়া দেন, যাহার পুত্রবধু অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মরিয়াছে, তাঁহার মৃত্যুর পরে তাঁহারই