পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাগলের কথা।

মুহূর্ত্তের জন্য আমি সাত বৎসর পিছাইয়া যাই; দেখিতে পাই কীর্ত্তিনাশাবক্ষে প্রবল ঝটিকাঘাতে তরঙ্গমালার উদ্দাম নৃত্য, দেখিতে পাই মাঝির পানসী রাখিতে পারিতেছে না, প্রবল বায়ুর সম্মুখে পড়িয়া অন্ধকার ভেদ করিয়া নৌকা কোন্‌ দিকে যাইতেছে তাহা কেহ বলিতে পারিতেছে না। ঝড়ের শ্রবণভেদী শব্দের মধ্য হইতে পরিচিত স্বরে কে যেন বলিতেছে “ভয় নাই” “ভয় নাই”। যখন চড়ায় লাগিয়া নৌকা খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল, নগদ দশ সহস্র মুদ্রা এবং অর্দ্ধ লক্ষের অধিক মূল্যের অলঙ্কার-জড়িত নববধূকে যখন কীর্ত্তিনাশা গ্রাস করিল, তখনও দূর হইতে কে যেন জড়িত স্বরে বলিতেছিল “ভয় নাই” “ভয় নাই”। বস্তুতঃ যখন বিবাহের যৌতুক সমেত আমার নববধূ পদ্মার গর্ভে আশ্রয় পাইতেছিল তখন আমার মনে এক মুহূর্ত্তের জন্যও ভয়ের উদয় হয় নাই। তখন আমি কি ভাবিতেছিলাম জান? যে আমাকে অভয় দিতেছে, সে যেন আমার পরিচিত, সে যেন আমার প্রিয়, সে যেন আমাকে অনেক দিন পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছে। নৌকা যখন ডুবিল তখন পিতার বিশ্বস্ত কর্ম্মচারী নুটবিহারী মুখোপাধ্যায় অলঙ্কারের বাক্স, এবং মুরেন নববধূকে বাঁচাইবার চেষ্টা করিয়াছিল। কি জানি কেন আমি তখন কাহাকেও বাঁচাইবার চেষ্টা করি নাই, নিজেও বাচিবার চেষ্টা করি নাই। যে আমাকে অভয় দিয়াছিল, সে যেন ক্রমশঃ নৌকার নিকটে আসিয়া বলিতেছিল “ভয় নাই” “ভয় নাই”। নৌকা যখন ডুবিল তখন স্পষ্ট দেখিতে পাইলাম, অলঙ্কারের ভারে মুখোপাধ্যায় তলাইয়া গেল, পর্ব্বতপ্রমাণ একটা তরঙ্গ আসিয়া সুরেনের হাত হইতে নববধূকে ছিনাইয়া লইয়া গেল। তখন আমার হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল, সে স্বর লীলার। লীলার কণ্ঠস্বর চিনিতে পারি নাই, এই ভাবিয়া, লজ্জায়