বিজয়া।
ডাকিল,—“ওহে সুরেন বাবু, একবার এই দিকে এস। নিকট হইতে উত্তর আসিল,—“এই দিক্টা কোনদিক্ বাবা, তা ত’ বুঝতে পাচ্ছি না, দিগ্বিদিক্ জ্ঞান যে শেয়ালদা ষ্টেসনে রেখে এসেছি।” জয়চাঁদ বলিল,— “আমি বাবুদের নিয়ে আস্চি।” তাহার পরক্ষণেই বুড়ার পিছনেই দুইটি অপূর্ব্ব মূর্ত্তির আবির্ভাব হইল। কলিকাতাবাসিগণ সেইরূপ শত শত মূর্ত্তি নিত্য দেখিয়া থাকেন, কিন্তু পল্লীগ্রামে তাঁহাদিগের দর্শন দুর্ল্লভ। তাঁহাদিগের পরণে অত্যন্ত মিহি দেশী ধুতি, তাহার কোঁচা কাদায় লুটাইয়া অপরূপ আকার ধারণ করিয়াছে, গায়ে মিহি আদ্ধির পাঞ্জাবী, তাহার ভিতর হইতে গেঞ্জির গোলাপী রং ফুটিয়া বাহির হইতেছে, পায়ে রেশমের রঙ্গিন মোজা ও কাল বার্ণিস করা পম্প্সু, তাহাতে এত কাদা জমিয়াছে যে চিনিতে পারা কঠিন। অঙ্গে জরির পাড় ঢাকাই উড়ানী—অধিকাংশ পিছনদিক হইতে কাদায় লুটাইতেছে; তাহ ছাড়া প্রত্যেকের হাতে সৌখীন ছড়ি ও অঙ্গে এসেন্স-সৌরভ। এহেন মূর্ত্তি পল্লীগ্রামে বড়ই দুর্লভ, সেই জন্যই “কলিকাতার বাবু” দেখিতে একপাল ঘোর কৃষ্ণবর্ণ অস্থিচর্ম্মসার লম্বোদর বালক তাহাদিগের সঙ্গ লইয়াছে। বাবুদ্বয় গৃছে প্রবেশ করিয়াই নাকে রুমাল দিলেন ও বলিলেন,—“কিসের গন্ধ হে?” জয়চাঁদ অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া বলিল,—“বাবু আমরা জাতিতে জেলে, গাছের উপরে জাল শুকাইতে দিয়াছি, তাহারই গন্ধ বাহির হইয়াছে।” দ্বিতীয় বাবুটি লোলুপ নেত্রে বিজয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করিতেছিলেন। বিজয়ী নূতন লোক দেখিয়া সরিয়া গিয়াছিল বটে,কিন্তু পল্পীসুলভ চপলতাবশতঃ ঘোমটার ভিতর হইতে তাহাদিগকে দেখিতেছিল। সুরেন্দ্রবাবু এতক্ষণ তাহাকে দেখিতে পান নাই, দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন,—“উঃ!”