গুচ্ছ।
তাঁহার সঙ্গী মৃদুস্বরে বলিলেন,—“গোবরে পদ্মফুল।” জয়চাঁদ তাহা শুনিতে পাইল না, কিশোরীর মুখ লাল হইয়া উঠিল, সে বলিল—“ওহে, তোমাদের এখানে থাকিয়া কাজ নাই, এখনই জালের গন্ধে মাথা ধরিবে।” সকলেই উঠিলেন। তাহাদিগের চাহনির ভাব দেখিয়া বিজয়া পূর্ব্বেই ঘরের ভিতরে পলায়ন করিয়াছিল।
৩
আজ নবমী। জয়চাঁদ সন্ধ্যার পূর্ব্বেই মাছ ধরিতে গিয়াছে। গ্রামের অনতিদূরে চারি পাঁচটি নদী একত্র মিশিয়া একটি প্রকাণ্ড হ্রদে পরিণত হইয়াছে; গ্রাম্যভাষায় ইহার নাম “বাঁওড়”। এখন নদী-নালা শুকাইয়া গিয়াছে, বর্ষাকালেও পর্য্যাপ্ত পরিমাণ জল হয় না, মৎস্যকুল ত নির্ব্বংশ হইতে চলিয়াছে। সেই জন্যই অধিক মৎস্য প্রয়োজন হইলে ধীবরের “বাঁওড়ে” জাল ফেলিতে আসে। জয়চাঁদ জমিদার-বাড়ী মৎস্য আনিবার জন্য সন্ধ্যার পূর্ব্বেই নৌকা লইয়া বাহির হইয়া গেল, যাইবার সময় বিজয়াকে বলিয়া গেল,—“ওরে আমি বাঁওড়ে যাচ্ছি, ভোরের বেলায় ফিরিব।”
শরতের নির্ম্মল জ্যোৎস্না যখন রজতধারায় চারিদিক শুভ্র করিয়া তুলিল, তখন গ্রামের কোলাহল নিবৃত্তি হইয়াছে। সন্ধ্যার পূর্ব্বে সন্ধিপূজা শেষ হইয়া গিয়াছে, পূজাবাড়ী ছাড়িয়া দলে দলে নরনারী গৃহে ফিরিয়াছে। কাজের জন্য বিজয়া সেদিন আর ঠাকুর দেখিতে পারে নাই। ভাবিয়াছিল, সন্ধ্যার পরে ভিড় কমিলে যাইবে। কিন্তু যাই যাই করিতে করিতে রাত্রি অধিক হইয়া গেল। প্রথম প্রহরের শেষে একটু বাতাস উঠিল, কয়দিন হইতে তাহার মন খারাপ হইয়াছিল, হাওয়া দেখিয়া ভয় পাইল।