বিজয়া।
রন্ধন কার্য্য শেষ করিয়া দাওয়ায় বসিয়া অন্যমনস্ক হইয়া পিতার কথা ভাবিতে লাগিল। “বাঁওড়” সমুদ্র বিশেষ, একপার হইতে অপরপারে পাড়ি জমাইতে হইলে এক প্রহর কাটিয়া যায়, ঝড়ের সময়ে “বাওড়ে” নৌকার ভারি বিপদ। তাহার বৃদ্ধ পিতা ক্ষুদ্র নৌকা লইয়া এক “বাঁওড়ে” গিয়াছে, ভালয় ভালয় ফিরিলে সে পাঁচ পয়সার হরির লুট দিবে, ঠাকুরের নিকট বার বার এই কামনা করিতেছিল।
যেখানে ঘরের ছায়া পড়িয়া অন্ধকার হইয়াছিল, সেইখানে একটা কুকুর ডাকিয়া উঠিল, বিজয়া তাহা লক্ষ্য করিল না, সে তখন আপনার ভাবনা লইয়াই ব্যস্ত ছিল। নিঃশব্দে দুইজন লোক দাওয়ার উপরে উঠিল; বিজয়া তাহাও দেখিতে পাইল না, সে তখন একমনে পিতার উদ্ধারের জন্য নায়ায়ণকে ডাকিতেছিল। পশ্চিমে একখানা ঘন কাল মেঘ জ্যোৎস্নার আলোকে আরও কালো দেখাইতেছিল, সে তাহা দেখিয়া ভয়ে অবসন্ন হইয়া পড়িতেছিল। লোক দুইটি পা টিপিয়া টিপিয়া তাহার কাছে সরিয়া আসিল, বিজয়া তাহা জানিতে পারিল না। একজন তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল, দ্বিতীয় ব্যক্তি কাপড় দিয়া তাহার মুখ ও হাত পা বাঁধিয়া ফেলিল, বিজয়া চীৎকার করিবারও অবসর পাইল না। চীৎকার করিলেও কোন ফল হইত না, তাহাদিগের বাড়ীর নিকটে জনমানবের বসতি ছিল না, গ্রাম সেখান হইতে অনেক দূরে। লোক দুইটি তাহাকে কাঁধে করিয়া বাহির হইল।
মেঘে তখন আকাশ ছাইয়া গিয়াছিল, চাঁদ ঢাকিয়া গিয়াছিল, সুতরাং জ্যোৎস্নাও নিবিয়া গিয়াছিল। তথাপি তাহারা বিজয়াকে লইয়া পথ