গুচ্ছ।
ঘৃণায় মরমে মরিয়া গেলাম, জীবন-মরণের কথা তখন স্মরণ ছিল না। কিন্তু কীর্ত্তিনাশা আমাকে গ্রাস করিল না; কে যেন আমার হাত ধরিয়া ধীরে ধীরে লইয়া চলিল—সে করম্পর্শ বড় মধুর—আমার চির-পরিচিত। একাদশ বর্ষ পূর্ব্বে নব বসন্তের পূর্ণিমা রজনীতে প্রথম সে কর স্পর্শ করিয়াছিলাম, এই কথা মনে পড়িয়া গেল। তখন ঝড়, নৌকা-ডুবি, কীর্ত্তিনাশা, জীবন, মরণ, ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্ত্তমান ভুলিয়া গিয়া ঘুমাইয় পড়িলাম।
একটা বড় সুন্দর স্বপ্ন দেখিতেছিলাম। গ্রীষ্মের সিত পক্ষে লীলার অঙ্কে মস্তক রক্ষা করিয়া ছাদে শুইয়া আছি। লীলা বলিতেছে “দেখ, আমি বোধ হয় আর অধিক দিন বাঁচিব না।” তাহাকে শাস্তি দিবার জন্য মুষ্টি উত্তোলন করিতেছি, এমন সময় নীচে কে আমাকে ডাকিল। শুনিলাম মা বলিতেছেন “কে, সুরেন এলি? মণি ছাদে আছে।” ব্যস্তসমস্ত হইয়া লীলা তাহার অঙ্ক হইতে আমার মস্তক নামাইয়া দিয়া দূরে সরিয়া গেল। আমার নিকটে আসিয়া সুরেন যেন আমায় ডাকিল। তখন হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। লীলা যতদিন বাঁচিয়াছিল মাঝে মাঝে এমনই করিয়া সে আমাকে জ্বালাইত।
চাহিয়া দেখিলাম বারিকণাসিক্ত বালুকাসৈকতে শয়ন করিয়া আছি, সুরেন আসিয়া আমাকে ডাকিতেছে—আর দূরে আর্দ্র শুভ্র বসন পরিধান করিয়া আমার লীলা আমার প্রতীক্ষায় দাঁড়াইয়া আছে। তখন বুঝিলাম আমি বর্ত্তমানে—ভবিষ্যতে নহি। যে কোন উপায়ে হউক লীলাকে ফিরিয়া পাইয়াছি। তখন উন্মত্তের ন্যায় “লীলা” “লীলা” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিলাম, ঝড়ের সমস্ত শব্দ ডুবাইয়া