গুচ্ছ।
ছাড়িয়া বন পথে প্রবেশ করিল এবং আম ও কাঁঠাল গাছের ছায়ায় ছায়ায় গ্রামের বিপরীত দিকে চলিয়া গেল।
হ্রদের প্রশান্ত বক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীচিমালা কৌমুদী লইয়া খেলা করিতেছিল, তখনও মেঘ দেখা দেয় নাই। ডিঙ্গিতে বসিয়া জয়চাঁদ একমনে তাহাই ভাবিতে ছিল, আর মাঝে মাঝে দাঁড় বাহিয়া মৃদু গতিতে নৌকা চালাইতেছিল। পশ্চিমে ধীরে ধীরে যে মেঘখান উঠিতেছিল, তাহা সে লক্ষ্য করে নাই। বাতাস উঠিতে তাহার চৈতন্য হইল। অনেক কষ্টে প্রায় পঞ্চাশ টাকার সূতা খরচ করিয়া জয়চাঁদ একখানি বেড়জাল বুনিয়াছিল, আজ সে সেইখানা লইয়া আসিয়াছে। বেড়জাল লইয়া মাছধরা একজনের দুঃসাধ্য, কিন্তু তাহার জালখানা ছোট বলিয়া এবং লোকেরও অত্যন্ত অভাব বলিয়া সে একাই জাল লইয়া আসিয়াছিল।
বাতাস কমিল না, বরং উত্তরোত্তর হাওয়ার জোর বাড়িতে লাগিল দেখিয়া বুড়া মনে মনে খুব বিরক্ত হইল। এমন সময়ে একটা দম্কা বাতাস আসিয়া নৌকাখানাকে ঘুরাইয়া দিয়া গেল; বুড়া তখন ব্যস্ত হইয়া জাল গুটাইতে বসিল। দেখিতে দেখিতে মেঘ বাড়িয়া উঠিল, চারিদিক্ অন্ধকার হইয়া গেল, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়িতে লাগিল; বৃদ্ধের নৌকা তখনও “বাঁওড়ের” মাঝখানে। তাহাতে জয়চাঁদ ভয় পায় নাই, জীবনে সে অনেক ঝড় দেখিয়াছে, ইহা অপেক্ষা ভীষণ ঝড় হইতে নৌকা বাঁচাইয়া আসিয়াছে;—তাহার ভাবনা হইতেছিল জাল খানার জন্য। সে ভাবিতেছিল জালখানা কোন রকমে তুলিতে পারিলে সে ডিঙ্গি লইয়া তীরের মত ছুটয় যাইবে এবং কোন না কোন নদীর মোহানায় আশ্রয় লইবে। কিন্তু তখন সে বৃদ্ধ হইয়াছে, তাহার দেহে আর তত বল নাই,