পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিজয়া।

জাল তুলিতে তুলিতে ভীষণ ঝড় উঠিল, নৌকা রক্ষা করা কঠিন হইয়া উঠিল। জাল উঠাইয়া যখন সে নৌকা বাহিতে আরম্ভ করিল তখন চারিদিক্ হইতে দম্‌কা বাতাস আসিয়া ক্ষুদ্র ডিঙ্গিখানিকে অস্থির করিয়া তুলিল। ডিঙ্গি তখন আর বৈঠা মানিতে চাহে না, মাঝে মাঝে ঝড়ের মুখে ডিঙ্গিখানি তীরের মত চুটিয়া যায়, আবার কোথা হইতে একটা দমকা বাতাস আসিয়া ডিঙ্গিখানিকে ঘুরাইয়া দেয়। অনেকক্ষণ পরে জয়চাঁদ বুঝিতে পারিল, ডিঙ্গি কোন নদীর মুখে প্রবেশ করিয়াছে। তাহার পশ্চাতে পর্ব্বতের মত উন্মত্ত তরঙ্গরাশি ছুটিয়া আসিতেছিল বটে, কিন্তু কূলে আঘাত লাগিয়া তাহা ভাঙ্গিয়া যাইতেছিল, ডিঙ্গির আর কোন ক্ষতি হইবার সম্ভাবনা ছিল না।

 গ্রাম হইতে একক্রোশ দূরে চৌধুরী মহাশয় একখানি বাগান প্রস্তুত করিয়াছিলেন। তাহাতে ফুলের গাছই অধিক, বহুমূল্য আমের কলমও ছিল, কিন্তু সেগুলি তখনও বড় হয় নাই, কিশোরীর পিতা এই বাগানে একখানি ঘর তৈয়ারী করিয়াছিলেন এবং কখনও কখনও গ্রীষ্মকালে সেইখানে বাস করিতেন। ঝড়ের রাত্রিতে বাগানের ঘরের ভিতরে একটি আলোক দেখা যাইতেছিল, চারিদিকের দরজা-জানালা বন্ধ, ঘরের বারান্দায় দুইজন নীচজাতীয় লোক বসিয়াছিল। তখন প্রবল বেগে ঝড় বহিতেছে, তাহার সহিত মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছে, এমন ঝড় বাঙ্গালা দেশে অনেকদিন হয় নাই। ঘরের ভিতরে চারিটী মানুষ ছিল, তাহাদিগের মধ্যে তিন জন পুরুষ একজন স্ত্রীলোক। স্ত্রীলোকটি বিজয়া, তাহার হাত পা বাধা, কিন্তু মুখ খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। বিজয়া কোন কথা

১০৫