বিজয়া।
ধরিয়া একক্রোশ পথ চলিলে তবে “বাঁওড়ে” উপস্থিত হওয়া যায়। বিজয় সেই পথেই ছুটিতেছিল।
সে হঠাৎ স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইল, দেখিল সম্মুখে বিশাল উর্ম্মিরাশি ভীষণবেগে তটভূমি আক্রমণ করিতে আসিতেছে। তাহাদিগের গভীর শব্দ ঝড়ের বিপুল গর্জ্জন ডুবাইয়া দিতেছে। সম্মুখে “বাঁওড়”। অকস্মাৎ তাহার মনে হইল যে তাহার পিতা নিশ্চয়ই “বাঁওড়ে”র কোন না কোনও স্থানে আছে, তখন তাহার মনে সাহস হইল, সে চীৎকার করিয়া ডাকিল “বাবা!” তরঙ্গের পর তরঙ্গ, প্রবল বাত্যার তাড়নে তীরে লাগিয়া ভাঙ্গিয়া যাইতেছিল, প্রতিঘাতে প্রতি মুহুর্তে শত শত বজ্রনাদের সৃষ্টি হইতেছিল, তাহা ভেদ করিয়া উঠিবার শক্তি রমণীর কণ্ঠে নাই। বিজয়ী আবার ডাকিল “বাবা!” কে উত্তর দিবে? তরঙ্গের আঘাতে তীরের কিয়দংশ ভাঙ্গিয়া পড়িল, বিজয়া ভাবিল কে আসিতেছে। সে যেমন অগ্রসর হইতে যাইবে অমনই গগন বিদীর্ণ হইয়া বজ্রশিখার উজ্জ্বল আলোকে চারিদিক উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল, বিজয়া বিস্মিতা হইয়া দেখিল, সম্মুখে একটা শ্বেতবর্ণ জন্তু দাঁড়াইয়া আছে। সে অনেক সহ্য করিয়াছিল— আর পারিল না, বজ্রশিখা নির্ব্বাপিত হইবার পূর্ব্বেই দে মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেল।
ভাগ্যচক্রের পরিবর্ত্তন আশ্চর্য্য ও বিস্ময়কর। বিজয়া যেখানে মূর্চ্ছিতা হইয়া পড়িল, তাহার অনতিদূরে একটা কাণানদীর মোহানায় জয়চাঁদ ডিঙ্গি লইয়া আশ্রয় লইয়াছিল। বহুকাল পূর্ব্বে ইচ্ছামতী নদী সেই খাদে প্রবাহিত হইত, নদীর গতি এখন পরিবর্ত্তিত হওয়ায় তাহা বিলে পরিণত হইয়াছে, সেই জন্য লোকে পুরাতন খাদকে কাণানদী বলিত।