পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাগলের কথা।

আমার কণ্ঠস্বর শ্রুত হইল। লীলা তাহা শুনিতে পাইল, হস্ত দ্বারা ইঙ্গিত করিয়া সে যেন আমাকে ডাকিল। আমিও “যাই” বলিয়া তাহার দিকে ছুটিলাম, কিন্তু সুরেন আমাকে যাইতে দিল না। অকস্মাৎ কোথা হইতে তাহার দেহে অম্বরের বল আসিল, আমি কিছুতেই তাহার হাত ছাড়াইতে পারিলাম না। তাহাকে মিনতি করিয়া, পায়ে ধরিয়া, অবশেষে বল প্রয়োগ করিয়া, গালি দিয়া, প্রহার করিয়া আমাকে ছাড়ির দিতে কছিলাম, কিন্তু সে কিছুতেই শুনিল না। আমার জন্য লীলা অনেকক্ষণ আর্দ্রবসনে পদ্মা-সৈকতে দাঁড়াইয়া রহিল। ক্রমে ঝড়ের বেগ মন্দ হইয়া আসিতে লাগিল, পূর্ব্বদিকে আলোকের ক্ষীণ রেখা দেখা দিল; হতাশ্বাস হইয়া লীলা বলিল “ওগো তুমি আসিবে না। আমি তবে যাই।” বড় করণস্বরে লীলা কথাগুলি বলিল, তাহার কথায় আমার হৃৎপিণ্ড যেন ছিন্ন ভিন্ন হইয়া গেল। আর একবার স্বরেনের পায়ে ধরিয়া লীলার কাছে যাইবার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করিলাম, সে আমার কথা বিশ্বাস করিল না, হাসিয়া উঠিল, কিন্তু হাসির সহিত তাহার দুইটি অশ্রুবিন্দু গড়াইয় পড়িল। লীলা আবার বলিল “তবে যাই”। ধীরে ধীরে তাহার দেবদুল্লভ মূর্ত্তি পদ্মাগর্ভে বিলীন হইয়া গেল, আমি ক্রোধে, ক্ষোভে অধীর হইয়া সুরেনের হাত ছাড়াইবার চেষ্টা করিলাম, না পারিয়া মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেলাম। সেই অবধি আমি পাগল, সেই অবধি আমি সুরেনকে দেখিলে চটিয়া যাই, বাল্যবন্ধুর দর্শনে ক্রোধে ধৈর্য্যহারা হই, কিন্তু ইহার জন্য লোকে আমাকে পাগল বলে কেন, আমি তাহা বুঝিতে পারি না।