পথ-হারা
পায়ে পায়ে কাদা উঠিয়া পথ এত পিচ্ছিল হইয়াছে, যে কিশোরী সে পথে চলিতে ভরসা করিতেছে না। সে অতি ধীরে ধীরে পা টিপিয়া টিপিয়া কাদার উপর দিয়া চলিতেছিল, তাহার হাতে একখানি পিতলের রেকাবি, তাহাতে কাঁচা মাটীর কয়েকটা প্রদীপ, ভুলার সলিত ও ঘৃত দিয়া সাজান। সেইগুলি পড়িয়া যাইবার ভয়ে কিশোরী অতি ধীরে ধীরে চলিতেছিল, পা পিছলাইয়া যাইবার ভয়ে সে একবার পথের কাঠগুলি চাপিয়া ধরিতেছিল।
ঘাটের রাণার উপরে বসিয়া একটি কর্দ্দমলিপ্ত বালক আমসত্ব ভক্ষণ করিতে করিতে বালিকার প্রতি লক্ষ্য করিতেছিল, বালিকা একবার পড়িতে পড়িতে রহিয়া গেল, বালক তাহা দেখিয়া হাসিয়া উঠিল। বালিকা ফিরিয়া চাহিয়া দেখিল; তখন বালকটি বলিয়া উঠিল “সুরি, থালাখানা আমাকে দে, আমি পৌঁছে দিই?” বালিকা উত্তর করিল “তোর যে এঁটো হাত!”
বালক। তা হোক্গে—কেউ তো আর দেখতে আসছে না।
বালিকা। দূর পাগল, তাই কি হয়, এ যে ঠাকুরদের জিনিষ।
বালক। ঠাকুররা তো আর দেখতে আস্ছে না।
বালিকা। মা বলেন, ঠাকুররা সব দিকে সব সময় দেখতে পান।
বালক। বাবা, তুই যেন ভাই পুরুত মশাই! তোর সঙ্গে কথা কইবার যো নাই।
বালিকা কথা কহিবার জন্য দাঁড়াইয়াছিল আবার চলিতে আরম্ভ করিল। দেখিতে দেখিতে তাহার পা পিছলাইয়া গেল, সে পথের কাঠ ধরিয়া সামলাইল বটে, কিন্তু রেকারী হইতে দুইটী