পথ-হারা।
সুরমার মাতা তুলসীতলায় সন্ধা দিতেছিলেন, দূর হইতে সুরমাকে দেখিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন “সুরি, তুই যে বড় ফিরে এলি?”
সুরমা! কাদায় পড়ে গিয়েছিলুম মা, তাই আবার প্রদীপ নিতে এসেছি।
মাতা ঠাকুর ঘর হইতে প্রদীপ বাহির করিয়া দিলেন, কন্যা তাহা রেকবীতে তুলিয়া লইল, মাতা তখন আবার বলিলেন “তুই অন্ধকারে এক যেতে পারবি ত?”
সুরমা। এক কেন, আমার সঙ্গে যে মণিলাল এসেছে?
মাতা। কই?
সুরমা। ওই যে কাঁঠালতলায় দাঁড়িয়ে আছে।
মাতা। আমিত তাকে দেখতে পাইনি।
বাস্তবিক মণিলাল নিতান্ত অপরাধীর ন্যায় দূরে অন্ধকারে দাঁড়াইয়া ছিল। সুরমা আঙ্গিনা ছাড়াইয়া বাহির হইল, মণিলাল কিছু না বলিয়া পিছু পিছু চলিল।
সুরমার মাতা তুলসীতলায় প্রণাম করিতে করিতে বলিতে লাগিলেন, হে ঠাকুর। আমার সুরির যেন মণিলালের সঙ্গে বিবাহ হয়।
২
দীর্ঘ বৎসর গুলা যেন দেখিতে দেখিতে কাটিয়া যায়, কালের গীতি অবিরাম, কিন্তু নীরব। দেখতে দেখতে পাঁচ বৎসর অতীত হইয়া গিয়াছে। দৌলতপুর গ্রামে অনেক পরিবর্ত্তন হইয়াছে; সুরমা আর কিশোরী নাই, মণিলালও কাদা মাখিয়া গঙ্গার ঘাটে বসিয়া আমসত্ব খায় না। সুরমা এখন পূর্ণ যুবতী, কিন্তু এখনও তাহার বিবাহ হয় নাই।