গুচ্ছ।
আর আমাকে বানান দেশের গল্প শুনাইত। বিদেশ হইতে আসিয়া আমি এখনও বাড়ী যাই নাই গুনিয়া বৃদ্ধ বড়ই আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া গেল, আমাকে বলিল “বাবু আমি ভাবিয়ছিলাম কলিকাতাতেই আপনার বাড়ী।” দেশে আমার কেহ নাই; যাঁহারা আমার ছিল, তাঁহাদের হারাইয়া উদাস প্রাণে সপ্তদশ বর্ষ বয়সে মহাসমুদ্রের পারে গিয়াছিলাম। শুনিয়া বৃদ্ধ দুঃখিত হইল। জ্ঞাতি যাহারা আছেন তাঁহারা যে আমাকে দেখিয়া বিশেষ সন্তুষ্ট হইবেন না, তাহা বলিবামাত্র বৃদ্ধ বুঝিতে পারিল। তাহার দেশেও তাহার জ্ঞাতিবর্গ আছে। সে যখন দেশে দেশে ঘুরিয়া বেড়াইত তখন তাহারা সানন্দে তাহার জমীজমার অংশগুলি ফাঁকী দিয়া লইয়াছিল। তাহার পর বৃদ্ধ যখন শুনিল যে, আমার বয়স ছাব্বিশ বৎসর কিন্তু তখনও বিবাহ করি নাই, তখন সে বড়ই দুঃখিত হইল। বৃদ্ধ বলিল যে, বৃদ্ধা স্ত্রী ও শিশু কন্যা ব্যতীত তাহার জীবনের আর কোন বন্ধন নাই। সে দেশে ফিরিয়া আসিয়াছে কিন্তু তথাপি তাহার স্ত্রী কন্যার নিকট হইতে বহুদূরে আছে। কন্যাটিকে দেখিবার জন্য সময়ে সময়ে তাহার মন বড়ই ব্যাকুল হইয়া উঠে। যখন হাতে কাজ না থাকে তখন চিন্তার হাত হইতে পরিত্রাণ পাইবার জন্য সে একমনে জাল বুনতে থাকে। ক্রমে জেটির সকল লস্করই আমায় চিনিয়া ফেলিল এবং সারেঙের বন্ধু বলিয়া আমাকে খাতির করিত।
একদিন একখানি জাপানী জাহাজ আসিয়া জেটতে লাগিতেছিল, আবদুলের সেদিন আর কথা কহিবার অবকাশ ছিলনা। লস্করেরা জাহাজের কাছি বাঁধিতেছিল। সিঁড়ি লাগাইতেছিল, আবদুল ব্যস্ত হইয়া জেটার চারিদিকে ছুটিয়া বেড়াইতেছিল! জাহাজখানা তখনও