পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

গিয়াছিল, তাহার পরণের কাপড়খানি তখনও স্রোতের বেগে ভাসিতেছিল। বালকের দেহ লইয়া যখন উপরে উঠিলাম, তখন জাহাজ ও জেটির লোকেরা চীৎকার করিয়া উঠিল, শুনিতে পাইলাম, সকলে চীৎকার করিয়া জাহাজ থামাইতে বলিল, জেটির উপর হইতে পাঁচ সাতজন লোক আমার হাত হইতে বালকের দেহ তুলিয়া লইল। এমন সময়ে প্রায় বিশহাত দূরে আবদুল ভাসিয়া উঠিল, লোকে তাহাকে দেখিয়া আবার চীৎকার করিয়া উঠিল, কিন্তু সে হাত নাড়িয়া জানাইল যে সে কিছুই পায় নাই। তাহার পরক্ষণেই আবদুল পুনরায় ডুব দিল, জাহাজ তখন জোট হইতে পাঁচ হাত দূরে। সকল লোকেই তখন জাহাজ থামাইবার জন্য চীৎকার করিতেছে, জাহাজের কর্ম্মচারীরাও তাহাদের ভাষায় কি আদেশ দিতেছিল, তাহা শুনিয়া আমার ভরসা হইল, আমি পুনরায় ডুবিলাম। দুই তিন বার ডুব দিয়া গঙ্গামৃত্তিকা স্পর্শ করিলাম,চতুর্থ বারে বালিকাকে পাইলাম, তখনও তাহার চেতনা ছিল, সে সবলে আমার হাত চাপিয়া ধরিল। আমি তখন তাঁহাকে লইয়া উপরে উঠতে লাগিলাম। অল্পদূর উঠিয়াই মাথায় বড় লাগিল, বুঝিলাম জাহাজের বা জেটির তলায় আসিয়াছি, ধীরে ধীরে তলা ধরিয়া উপরে উঠিলাম। তখন আমার শ্বাস প্রায় রুদ্ধ হইয়া আসিয়াছে। বুঝিলাম জাহাজ থামান হয় নাই। তখন জেটি বা জাহাজের উপরের লোক আমাকে আর দেখিতে পাইতেছে না। বালিকা প্রায় অচেতন হইয়া পড়িয়াছে, প্রাণপণ শক্তিতে জেটির পাশে যাইবার চেষ্টা করিলাম। পাঁচ-সাতখানিবড় নৌকার উপরে জোট নির্ম্মাণ করা হইয়াছিল, দেখিলাম দুইখান নৌকার মধ্যে একজন লোক জলে ভাসিতেছে, সে আবদুল।

১৩৪