পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভবিতব্য



আবদুল অনেক রাত্রি অবধি বসিয়া আমার সহিত গল্প করিয়া গেল। তাহারপর সে প্রায়ই আসিত, রসময় বাবু স্বয়ং আমার তত্ত্বাবধান করিতেন, কিন্তু সে কিশোরীকে আর দেখিতে পাইতাম না। সপ্তাহ কাল মধ্যে সুস্থ ও সবল হইয়া উঠিলাম, গৃহস্বামীর নিকট বিদায় লইয়া বাসায় ফিরিলাম।

 আমার নিজের পরিচয় দিতে ভুলিয়া গিয়াছি, আমার নাম শ্রীচন্দ্রশেখর বসু, নিবাস বর্দ্ধমান জেলার অন্তর্গত হরিশপুর গ্রামে। জীবনের প্রথম সপ্তদশ বর্ষ কলিকাতায় কাটাইয়াছি, আমার পিতা আলিপুরে জজ আদালতে ওকালতি করিতেন, কিন্তু তিনি বিশেষ কিছু সঞ্চয় করিয়া রাখিয়া যাইতে পারেন নাই। সপ্তদশ বর্ষ বয়সে পিতৃহীন হইয়া অন্ধকার দেখিলাম, আমি আশৈশব মাতৃহীন। কলিকাতায় আসিলাম, তখন যুদ্ধের জন্য আফ্রিকায় সৈন্য যাইতেছিল, এক পিতৃবন্ধুর অনুগ্রহে চাকরি পাইয়া দেশত্যাগ করিয়া ছিলাম, তাহার নয়বৎসর পরে দেশে ফিরিয়াছি। কলিকাতার একটি ক্ষুদ্র গৃহে আমি এবং আমার বিদেশের সহচর রামদীন বাস করিতাম। আরোগ্য-লাভ করিয়া ধীরে ধীরে বাসায় ফিরিলাম, দেখিলাম দরজায় তালা লাগাইয়া রামদীন কোথায় চলিয়া গিয়াছে। ক্লান্তিবোধ হওয়ায় দরজায় বসিয়া পড়িলাম, মাথাটা কেমন করিয়া উঠিল। কলিকাতা সহরে কেহ কাহারও খোঁজ খবর লীয়না। রাস্তা দিয়া অবিরাম জনস্রোত বহিয়া যাইতেছিল, কিন্তু কেহই আমার দিকে ফিরিয়া চাহিল না। অনেকক্ষণ পরে একটু সুস্থ বোধ করিলাম। পাশে কলেজের ছাত্রদের একটা মেস ছিল, উপরের ঘরে একটা ভাঙ্গা হারমোনিয়ম লইয়া কে গাহিতেছিল:—

১৩৭