পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

দেখাইতেন, আর বলিতেন “মেয়েটি কেমনঘরে পড়বে বল্‌তে পার বাবা?” যে যেমন পূজা পাইত, সে ঠিক সেই ওজনে ভবিষ্যৎ-বাণী করিয়া যাইত; কেহ বলিত, তোমার মেয়ে রাজরাণী হইবে; আবার কেহব বলিত, তোমার মেয়ে সুখে থাকিবে।

 দেখিতে দেখিতে নিরু বারবছরে পড়িল, তখন তাহার মা পাগলের মত হইয়া উঠিলেন। চারিদিক হইতে ঘটক আসিতে লাগিল, কিন্তু কোন সম্বন্ধই নিরুর পিতার পছন্দ হইলনা। নিরুর মাতা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি উত্তর করিতেন “মেয়ের বরাতে যা আছে তা হবেই, আমি কি করবো বল?” অনেকদিন পরে জগৎপুরের রাজবাড়ী হইতে নিরুর সম্বন্ধ আসিল, পাত্রপক্ষ কন্যা পছন্দ করিয়া গেল, নিরুর পিতারও বর পছন্দ হইল। মেয়ে রাজরাণী হইবে ইহাতে কোন্‌ পিতার আপত্তি থাকে। নিরুর মাতার ইহাতে বিশেষ আপত্তি থাকিলেও তিনি মেয়ের অকল্যাণের ভয়ে প্রকাশ্যে কোন কথা বলেন নাই। তাঁহার ইচ্ছাছিল যে, সমানঘরে মেয়ের বিবাহ হয়, কারণ তাহা হইলে নিরু কখন কখনও বাপের বাড়ী আসিয়া থাকিতে পরিবে, মেয়েজামাই লইয়া সাধ আহলাদ করিতে পাইবেন। তাই একদিন মুখ ফুটিয়া স্বামীকে বলিয়া ফেলিয়াছিলেন “দেখ, রাজবাড়ীতে নিরুর বিয়ে হলে সময় অসময় আন্‌তে পারব না, হয়ত মরবার সময় একবার চোখেও দেখতে পাব না।” নিরুর পিতা উত্তর করিলেন “এই জন্যই বলে বারহাত কাপড়ে মেয়েমানুষের কাছা নাই। নিরু যদি রাজরাণী হয় তাহলে কি তোমার মরণের সময় রক্ষা থাক্‌বে। জগৎপুর শুদ্ধ তোমার এই বাড়ীর উঠানে এসে বস্‌বে।”

১৪২