গুচ্ছ।
শেষ হইল, নিরুপমা প্রসাদ লইয়া আহারে বসিল। সামান্য দাসীর ন্যায় সামান্য পাত্রে, অন্যান্য মহিলাগণের সহিত কন্যাকে আহার করিতে দেখিয়া মাতার নয়ন আবার জলে ভরিয়া আসিল, কিন্তু কন্যা মনে ব্যথা পাইবে বলিয়া মনের কথা প্রকাশ করিলেন না।
আহার করিয়া মাতাকে লইয়া নিরুপমা অন্দরমহলে ফিরিল। মাতা দেখিলেন যে অন্দরমহলে বহুমূল্য সাজসজ্জার কোনই অভাব নাই। নিরুপমা শয়ন-কক্ষের বাহিরে একখানি মাদুর পাতিয়া বসিল, তাহার মাতা ঘুরিয়া ফিরিয়া দেখিলেন যে সুসজ্জিত বহুমূল্য আসবাবে শয়ন কক্ষটি পরিপূর্ণ, কিন্তু কেহ যেন তাহা ব্যবহার করে না। নিরুপমা মাদুরের উপরে আঁচল বিছাইয়া গুইয়া পড়িল। একজন দাসী তাঁহাকে বাতাস দিতে আসিল, সে তাহার হাত হইতে পাখ কাড়িয়া লইয়া তাহাকে তাড়াইয়া দিল, তাহা দেখিয়া তাহার মাতার হৃদয় আরও আকুল হইয়া উঠিল। রাণীমায় মা আসিয়াছেন শুনিয়া অন্দর মহলের সকলেই তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসিল। নিরুপমার মাতা তাহাদিগের নিকট একটি একটি করিয়া সকল কথা শুনিতে পাইলেন। এমন ভুবনমোহিনী রূপের দিকে রাজা কখনও চাহিয়াও দেখেন না, পথ ভুলিয়াও কখন অন্দরমহলে আসেন না, পত্নীকে কখনও একটি মিষ্ট কথাও বলেন না। এই সকল কথা শুনিয়া, নিরুপমার মাতা পাগল হইয়া উঠিলেন। কন্যার গৃহ তাঁহার বিষবৎ বোধ হইতেছিল তিনি নিরুপমার নিকট বিদায় লইয়া গৃহে ফিরিলেন। আসিবার সময় কন্যা মাতার গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল “মা আবার আসিও, মাতাও কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন “আসিব বই কি মা, আবার আসিব।”