পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সোণার বালা।

 প্রথমে রাজা শ্যামাদাসের চরিত্রদোষ ছিলন, কিন্তু কুসংসর্গে পড়িয়া রাজা ক্রমশঃ চরিত্রহীন হইলেন, সে কথা নিরুপমার কর্ণে পৌঁছিতে বাকি রহিলনা। স্বামী কাহাকে বলে তাহা সে জানিতনা, স্বামীকে সে চিনিতে পারে নাই, তথাপি সে হৃদয়ে বেদন বোধ করিল। বড় হইয়া সংসারের কথা সে কতকটা বুঝিয়াছিল, তাহার প্রাপ্য হইতে যে সে বঞ্চিত হইয়াছে সে তাহা বুঝিয়াছিল। চারিদিকে সুখদুঃখ মিশ্রিত সংসারে কত শত শত ভাগ্যবতী স্বামীপুত্র লইয়া ঘর করিতেছে, তাহা দেখিয়া অজ্ঞাত আকাঙ্ক্ষায় তাহার হৃদয় আকুল হইয়া উঠিত, অপরিসীম যন্ত্রণায় তাহার ক্ষুদ্র নারীহৃদয় ফাটিয়া যাইত বটে, কিন্তু তাহার মুখ ফুটিত না। উপায় নাই দেখিয়া সে গোপালের সেবায় জীবন উৎসর্গ করিয়াছিল। সে ভাবিয়া লইল যে গোপাল তাহার পুত্র, তাই সে গোপালের বেশভূষায়, সাজসজ্জায় ও সেবায় দিন কাটাইয়া দিত। অন্দরমহলের ঐশ্বর্য্য তাহার অসহ্য বোধ হইত; তাই সে সমস্ত দিন ঠাকুর-বাড়ীতে কাটাইয়া দিত। রাত্রিতে তাহার সুসজ্জিত শয়ন-কক্ষের এককোণে একখানি মাদুর বা কম্বল পাতিয়া পড়িয়া থাকিত। তথাপি তাহার শয়ন-কক্ষ সর্ব্বদা সুসজ্জিত থাকিত, শয্যা কোনও দিন অপরিষ্কৃত থাকিলে দাসীগণ তিরস্কৃত হইত। একদিন কে তাহকে বলিয়ছিল যে রাজা বড় গোলাপ ফুল ভালবাসেন, তাহার পর হইতে বারমাস স্বগন্ধী বহুমূল্য গোলাপ ফুলে তাহার ঘরগুলি সাজান থাকত, সে যেন সর্ব্বদাই কক্ষের অধিষ্ঠাতৃ-দেবতার আগমনের অপেক্ষা করিত। তাহার রাশি রাশি বহুমূল্য অলঙ্কার ছিল, তাহা সে কখনও পরিতনা, দুহাতে দুগাছি সোণার বালা পরিয়া দিন কাটাইয়া দিত।

১৪৯