গুচ্ছ।
পাপের স্রোত বড় দ্রুত, তাহাতে গা ঢালিয়া দিলে আর গতিরোধ হয় না। পূর্ব্বে রাজসংসারে অর্থের অভাব ছিলনা, কিন্তু ক্রমশঃ তাহাও হইল, একে একে সমস্ত জমিদারীগুলি বন্ধক পড়িল। অবশেষে বিক্রয় হইয়া গেল। মধুর অভাব হইলে মধুমক্ষিকা থাকে না, শ্যামাদাসের অর্থাভাব দেখিয়া বন্ধুবান্ধব তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া গেল। যাহার চিরকাল জগৎপুরে রাজসংসারে প্রতিপালিত হইয়াছিল, তাহারাও ক্রমশঃ ছাড়িয়া গেল। নিরুপমা ক্রমশঃ একা পড়িল। একদিন শ্যামাদাসের মনে পড়িল যে,নিরুপমার বহুমূল্য অলঙ্কার আছে। রাজা ধীরে ধীরে অন্দরমহলে প্রবেশ করিলেন, যে দুই একজন দাসদাসী ছিল তাহারা আশ্চর্ঘ্য হইয়া গেল। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন “রাণী কোথায়?” একজন দাসী তাহাকে নিরুপমার শয়ন কক্ষ দেখাইয়া দিল, সে তখন গৃহের এক কোণে মাদুরের উপরে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। দাসী তাঁহাকে ডাকিয়া দিতে গেল, কিন্তু রাজা তাহাকে নিষেধ করিলেন, দাসী পলাইল। কক্ষে খাটের উপর বসিয়া রাজা ডাকিলেন “নিরুপমা,” জীবনে তাঁহার এই প্রথম পত্নী-সম্ভাষণ। ডাক শুনিয়া নিরুপমা তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল। উঠিয়াই স্বামীকে দেখিতে পাইল এবং এক হাত ঘোমটা টানিয়া কোণে গিয়া দাঁড়াইল। রাজা আবার ডাকিলেন “নিরুপমা?” নিরুপমা উত্তর দিলনা। অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া রাজা বললেন “দেখ, বড়ই টাকার দরকার পড়েছে। তোমার গহনাগুলা একবার দিতে পার? আমি দিন কতক পরে আবার ফিরিয়ে দিব।” ঘোমটার ভিতরে বার কতক ঢোক গিলিয়া নিরুপমা বলিল “সে আর এখন আমার নেই। সে সব গোপালকে