পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

উঠিলাম। লীলা চলিয়া যাইবার পরে আমার চিন্তার শেষ ছিল না, নূতন বিবাহের প্রস্তাব হইয়া সে চিন্তা আরও বাড়িয়া উঠিয়ছিল। একটু তন্দ্রা আসিয়াছে সেই সময়ে ঘরের ভিতর কে যেন আবার হা-হা-করিয়া উঠিল। তন্দ্রা ভাঙ্গিল না, মনে হইল সে ঘরে সে হাসি যেন নূতন নহে, তাহার কণ্ঠস্বর যেন চির-পরিচিত। ধীরে ধীরে অন্ধকার ভেদ করিয়া শুভ্রবসন-পরিহিত রমণীমূর্ত্তি ফুটিয়া উঠিল, যেন স্পষ্ট দেখিলাম অবগুণ্ঠনাবৃত নারী কক্ষে প্রবেশ করিয়া দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া দিল। তখন আমি সুপ্ত কি জাগ্রত বলিতে পারি না, কিন্তু তাহার আকার, চলনের ভঙ্গী সমস্তই আমার পরিচিত, তাহার কেশাগ্র হইতে পদাঙ্গুলি পর্যন্ত সমস্ত অবয়ব যেন আমার চোখের সম্মুখে ভাসিতেছে। সে আমারই লীলা, অপর কেহ নহে। লীলা ঘরে ঢুকিয়া মুখ খুলিয়া হাসিয়া উঠিল, আমি চিরদিন তাহাকে যেমন ভাবে ডাকিতাম তেমন ভাবেই ডাকিয়াছিলাম, কিন্তু সে যে ভাবে আমার নিকট আসিত সে ভাবে যেন আসিল না। সে আসিল বটে কিন্তু দূরে রহিল, ভাবে বুঝাইয়া দিল যে এখন আমাদের মধ্যে একটা ব্যবধান পড়িয়া গিয়াছে, মিলনের একটা বাধা হইয়াছে, তখন আমার মনে ছিল না যে লীলা আর আমার নাই। রজনীর অধিকাংশ লীলার সহিত কথায় কাটাইয়াছিলাম। যখন জানাল দিয়া রৌদ্র আসিয়া আমাকে স্পর্শ করিল তখন আমার নিদ্রাভঙ্গ হইল, দেখিলাম অতি সন্তর্পণে শয্যার একপার্শ্বে শুইয়া আছি। একবার ভাবিলাম স্বপ্নে লীলাকে দেখিয়াছি, আবার ভাবিলাম স্বপ্নের ত সকল কথা মনে থাকে না, কিন্তু গত রাত্রির প্রত্যেক ঘটনাটি স্পষ্ট মনে রহিয়াছে। সে বলিয়া গিয়াছে আমি তাহারই,

১০