পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

দিয়া বলিত “ও কথা বলিও না, একা মাধু আমার শত পুত্রের কাজ করবে।” মাধুরী সত্য সত্যই মাধুর্য্যময়ী হইয়া উঠিল; যে তাহাকে একবার দেখিত, সে নয়ন ফিরাইয়া লইতে পারিত না। প্রতিদিন প্রভাতে মাধুরী যখন বৃদ্ধ পিতামহের হস্ত ধারণ করিয়া বিশাল পুষ্পোদ্যানে খেলিয়া বেড়াইত, তখন তাহাকে দেখিলে অপ্সরী বা দেবকন্যা বলিয়া ভ্রম হইত।

 জীবনমোহন দেশের বিখ্যাত বিখ্যাত জ্যোতির্ব্বিদ্‌গণের দ্বারা পৌত্রীর জন্মপত্রিকা প্রস্তুত করাইয়াছিলেন, কিন্তু কোনও বিশেষ কারণে তিনি সর্ব্বদাই অস্থিরচিত্ত ও অসন্তুষ্ট থাকিতেন। বিদ্যাকাঠী গ্রামে বিদায়ের লোভে কোন জ্যোতির্ব্বিদ্‌ বা গ্রহাচার্য্য আসিলে তাঁহার আর সমাদরের অবধি থাকিত না। এইরূপে মাধুরীর শত শত জন্মপত্রিকা প্রস্তুত হইয়াছিল। একবার মাত্র বিক্রমপুরনিবাণী কৃষ্ণবর্ণ, খর্ব্বকায় এক ব্রাহ্মণ জন্মপত্রিকা প্রস্তুত না করিয়াই চলিয়া গিয়াছিল। সেদিন মাধুরী পিতামহের পার্শ্বে বসিয়াছিল, ব্রাহ্মণ আসিয়া সভাতলে বসিল, কাগজ কলম লইয়া জন্মপত্রিক লিখিতে লাগিল, কিন্তু কি দেখিয়া শিহরিয়া উঠিল, আর লিখিল না, কাগজখানি ছিঁড়িয়া ফেলিল। তখন ত্রস্ত হইয়া জীবনমোহন তাহাকে প্রশ্ন করিতে লাগিলেন, কিন্তু সন্তোষজনক কোন উত্তর পাইলেন না। বৃদ্ধ যখন কাতর হইয়া ধরিয়া পড়িলেন তখন ব্রাহ্মণ বলিল “বাবু নিয়তি কেহ খণ্ডাইতে পারে না, অর্থব্যয়ে শান্তিস্বস্ত্যয়নে যদি লোকে নিয়তির হাত এড়াইতে পারিত, তাহা হইলে জগতে শোক, দুঃখ, জরা, মৃত্যু থাকিত না।” মর্ম্মাহত হইয়া বৃদ্ধ বসিয়া পড়িলেন। ব্রাহ্মণ তখনও বলিতেছিল, “শান্তিস্বস্ত্যয়নের ব্যবস্থা

১৪