গুচ্ছ।
জন্য পুত্রবধূকে বড় তিরস্কার করিলেন। মাধুরীর মাতা ভূমিশয্যায় লুটাইয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া তাহার উত্তর দিয়াছিলেন। পিতামহের উপদেশ অনুসারে মাধুরী অলঙ্কার খুলিয়া ফেলিল, সীমন্তের সিন্দূর মুছিয়া ফেলিল, একবেলা হবিষ্যান্ন ভোজন করিতে আরম্ভ করিল; সাত দিনের মধ্যে ফুলের মত সুকুমার মাধুরী যেন শুকাইয়া উঠিল! সে প্রথম প্রথম তর্ক করিয়া বৃদ্ধ পিতামহকে বড়ই ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল। বিধবা হইলে মাছ খাইতে নাই কেন, থান পরিতে হয় কেন, স্বামী কে, ইত্যাদি যে-সমস্ত প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর এখনও পর্য্যন্ত পাওয়া যায় নাই সেইগুলি জিজ্ঞাসা করিয়া বৃদ্ধকে সেই বালিকা নির্ব্বাক করিয়া দিত।
কন্যার পরিবর্ত্তন দেখিয়া প্রমোদাসুন্দরী শয্যা আশ্রয় করিলেন, মাধুরীকে দেখিতে হইবে বলিয়া প্রাণমোহন অন্তঃপুরে আসা ত্যাগ করিলেন।
মাধুরী একে একে সব শিথিল, সব বুঝিল, তখন সে বালসুলভ চপলতা পরিত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসিনী সাজিল।
জীবনমোহন মাধুরীর শিক্ষা শেষ করিয়া পুনরায় তীর্থভ্রমণে চলিয়া গেলেন। তখন মাধুরী বড় বিপদে পড়িল। একাকী তাহার দিন আর কাটে না। পিতামহের উপদেশ-মত যতক্ষণ সময় পাইত শাস্ত্র-গ্রন্থ পড়িত, সংসারের কাজ তাহাকে বিশেষ কিছু করিতে হইত না, প্রমোদাসুন্দরী নিজেও কিছু দেখিতেন না, আত্মীয়াগণ সমস্তই সম্পন্ন করিতেন। মাধুরী অত্যন্ত আগ্রহের সহিত পিতামহের প্রত্যাবর্ত্তনের অপেক্ষায় রহিল।