পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

মনে মনে বড়ই বিরক্ত হইলাম। বৃদ্ধ আমার মনের ভাব বুঝিয়া পুনরায় কহিল, “ভাবিতেছ, আমি তোমাকে আশ্রয় দিতে অনিচ্ছুক বা এক বেলার খাদ্য দ্রব্য দিতে কুষ্ঠিত? তাহা নহে। যুবক, তোমার এখনও পরমায়ু আছে; যদি বাঁচিবার ইচ্ছা থাকে ত ফিরিয়া যাও। এ গৃহে আমি ব্যতীত রাত্রিবাস করিয়া কেহ বাঁচিয়া ফিরে নাই। এখনও পলাইয়া প্রাণ বাঁচাও।” আমি বলিলাম “অন্ধকার রাত্রি, বাহিরে ভীষণ ঝড় ও বৃষ্টি হইতেছে, ফিরিলে পথে মরিতে হইবে, তাহা অপেক্ষা যদি মরিতে হয় মানুষের কাছেই মরিব।” এক্কাওয়ালা এতক্ষণ বসিয়া ছিল, সে হঠাৎ বলিয়া উঠিল “বাবুজি, জানের দরদ কর, এখনও ফিরিয়া চল।” আমি বলিলাম “না।” বৃদ্ধ বুলিল, “বহুৎ আচ্ছা, তবে বইস।” এই বলিয়া সে খাট হইতে উঠিল এবং খাটিয়ার নীচে হইতে আর এক খান গালিচা বাহির করিয়া বিছাইয়া দিল। আমি তাহাতে বসিয়া পড়িলাম। বৃদ্ধ এক্কাওয়ালাকে একখানা কম্বল বাহির করিয়া দিল, সে তাহা মুড়ি দিয়া শুইয়া পড়িল। তাহার পর সে খাটিয়ার তল হইতে একটা বৃহৎ পেটারা বাহির করিল এবং তাহার ভিতর হইতে একখানা রূপার রেকারী বাহির করিয়া তাহাতে আমার জন্য খাবার সাজাইতে বসিল। রুটী, আঙ্গুর, পেস্তা, কিস্‌মিস ও আখরোট বাহির করিয়া আমার সম্মুখে ধরিল। আমি এক্কাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, সে কিছু খাইবে কি না। সে কম্বলের ভিতর হইতেই উত্তর করিল যে ভূতের বাড়ীতে তাহার কিছু খাইবার ইচ্ছা নাই, সে প্রাণ লইয়া ফিরিতে পারিলেই বঁচে। বড়ই ক্ষুধার উদ্রেক হইয়াছিল, একে একে খাদ্যদ্রব্যগুলি সমস্তই শেষ করিলাম।

৩২