গুচ্ছ।
নীল আলো জ্বলিতেছিল। গৃহে প্রবেশ করিয়া তাহার একখানা বড় চাদর বিছাইল, তাহার উপরে একখানা গালিচা পাতিল, আর একজন একটা ছোট সেজ আনিয়া গালিচার মাঝখানে রাখিল। তাহার পরে আরও কয়েকজন লোক আসিয়া গালিচার উপরে খাদ্যদ্রব্য সাজাইয়া দিয়া গেল। দুইজন মনুষ্য প্রবেশ করিয়া আহার করিতে বসিল, তাহাদিগের আকার দেখিয়া সন্ত্রান্তবংশীয় মুসলমান বলিয়া বোধ হইল। তাহারা ধীরে ধীরে আহার করিতে করিতে নানা কথা কহিতেছিল, কিন্তু আমি নিকটে থাকিয়াও কোন কথা বুঝিতে পারিলাম না, কেবল কাষ্ঠপুত্তলিকার মত নীরবে বসিয়া রহিলাম, আর বৃদ্ধা বজ্রমুষ্টিতে আমার হাত ধরিয়া পাষাণমূর্ত্তির ন্যায় বসিয়া রহিল। তাহাদিগের আহার শেষ হইয়া গেল, তাহারা চলিয়া গেল, পরিচারকেরা আসিয়া পাত্র, গালিচা ও দস্তরখান উঠাইয়া লইল। এমন সময় কে ঘরের মধ্যে ভীষণ আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল; চমকিত হইয়া চাহিয়া দেখিলাম এক্কাওয়ালা দাঁড়াইয়া উঠিয়াছে, দারুণ ভয়ে তাহার চক্ষুদ্বয় যেন কোটর হইতে নির্গত হইয়া পড়িতেছে, তাহার মুখ দেখিয়া বোধ হইল সে খুব ভয় পাইয়াছে। আলোকগুলি হঠাৎ নিবিয়া গেল। অন্ধকার ঘরে গুরুভার দ্রবা পতনের শব্দ শুনিতে পাইলাম, বুঝিলাম এক্কাওয়াল মুর্চ্ছিত হইয়া পড়িয় গেল, উঠিতে যাইতেছিলাম, বৃদ্ধ গা টিপিয়া নিষেধ করিল।
নীচে তখনও গোলমাল হইতেছিল, কিন্তু ক্রমে তাহা থামিয়া আসিল; মনে হইল কে যেন এস্রাজের সহিত সারেঙ্গীর সুর মিলাইতেছে। তাহারা অনেকক্ষণ ধরিয়া সুর মিলাইতে লাগিল; প্রথমে সুর মিলিল না, অনেকক্ষণ পরে মিলিল, তাহার পর সারেঙ্গী ও এস্রাজ একত্র মিলিয়া