গুচ্ছ।
ইলাহা ইল্লাল্লা” উচ্চারণ করিতে করিতে নীচে লইয়া গেল ও প্রাঙ্গণ পার হইয়া চলিয়া গেল। রমণী তখনও কাঁদিতেছিল, গুমরাইয়া গুমরাইয়া কাঁদিতেছিল, দেখিতে দেখিতে আলোকমালা নিবিয়া গেল, রমণী তখনও কাঁদিতেছিল। দারুণ যন্ত্রণায় কে যেন আবার আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল, আমি আর সহ্য করিতে পারিলাম না, মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িলাম।
যখন জ্ঞান হইল তখন দেখিলাম গালিচার উপরে শুইয়া আছি, ঘাসের বেড়ার ফাঁক দিয়া গৃহে রৌদ্র প্রবেশ করিতেছে। বৃদ্ধা বারান্দায় বসিয়া তামাকু সেবন করিতেছে, এক্কাওয়ালা তাহার পাশে বসিয়া আছে। বৃদ্ধা অপেক্ষাও বয়োজ্যেষ্ঠ একজন পরিচারক কক্ষ পরিষ্কার করিতেছে। উঠিয়া প্রশ্নের উপরে প্রশ্ন করিয়া বৃদ্ধাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিলাম। বুড়ী হাসিল, বলিল “তুমি আহার না করিলে কোন কথার উত্তর দিব না।” কোন মতেই তাহাকে প্রতিজ্ঞা হইতে বিচলিত করিতে পারিলাম না,অগত্য বাধ্য হইয়া স্নান ও আহার করিলাম। বুড়ি আলবোলা লইয়া খাটিয়ার উপরে বসিল। দিল্লী ও লক্ষনৌতে যেরূপ উর্দ্দু প্রচলিত সেই ভাষায় বৃদ্ধা আমাকে যে কাহিনী বলিল তাঁহাই সংক্ষেপে বলিতেছি। বৃদ্ধা বলিল—
“বাবুজি, আমি জাতিতে নর্ত্তকী। পূর্ব্বে হিন্দু ছিলাম, এখন মুসলমানী হইয়াছি। দিল্লী, লাহোর, গোয়ালিয়র ও লক্ষনৌতে রাজদরবারে নৃত্য করিতাম। বাবুজি, দ্বিতীয় আকবরের নাম শুনিয়াছ? যে হতভাগ্য বাদশাহ সিপাহি-বিদ্রোহের সময়ে সিংহাসনচ্যুত হইয়াছিল, আক্বর তাহারই পিতা। ষাট বৎসর পূর্ব্বে দিল্লী ও লাহোরের লোকে আমার নাম শুনিলে পাগল হইত। তওয়াইফ মহলে আমার বড় সুখ্যাতি ছিল। লাহোরে শিখ বাদশাহের দরবারে, গোয়ালিয়রে মহারাজ সিন্ধিয়ার