পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

নির্ম্মিত। রাজধানী পরিত্যাগ করিয়া শাহজাদা এই বনমধ্যে আসিয়া বাস করিতে লাগিলেন। পিশাচী মোগলকন্যা দিল্লীতে থাকিতে পারিল না, সলিমাবাদে আসিল, শাহজাদা তাহাকে অভ্যর্থনা করিয়া গৃহে আনিলেন। এখানে আসিয়া পিশাচী প্রাণ খুলিয়া আমাদের সহিত মিশিল, শাহজাদাও তাহার পূর্ব্ব-বিদ্বেষ বিস্মৃত হইয়া গেলেন। এখানে বড়ই সুখে বন্ধুবান্ধবে পরিবৃত হইয়া শাহজাদ দিল্লীর বিচ্ছেদ বিস্মৃত হইয়া গেলেন।

 “বাবুজি, শাহজাদা আমার গান শুনিতে বড় ভালবাসিতেন। তাঁহার আহবানে মালবের অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত গায়িকা ও নর্ত্তকী এই প্রাসাদে মজুরা করিতে আসিত বটে, কিন্তু কাহারও গান তাঁহার পছন্দ হইত না। বিবাহ হইবার পরে প্রতিদিন অন্দরমহলে মজলিস বসিত। সদর-মহলে প্রথম রাত্রিতে একদফা মজলিস বসিত, দুই একজন বিশেষ বন্ধু লইয়া শাহজাদা নিশীথ রাত্রিতে অন্দরমহলে আসিতেন। বাবুজি, তাহার আদেশে আমি তাহাদের সম্মুখে বাহির হইতাম; গানে ও নাচে রজনীর অধিকাংশ অতিবাহিত হইত। একদিন আমার কপাল ভাঙ্গিল। পিশাচী সেদিন অসুখের ভাণ করিয়া আমাদিগের সহিত মিশিল না, যথাসময়ে অন্দরমহলে মজলিস বসিল, দুই তিন খান গান গাহিবার পর পিশাচী কোথা হইতে ঝড়ের মত ছুটয়া আসিয়া শাহজাদার বুকে একখানা ছোর বসাইয়া দিল। তাঁহাকে পাল্কী করিয়া অন্য মহল হইতে আসিতে দেখিয়া পরিচারকেরা ভাবিয়াছিল যে বেগম অন্যদিনের ন্যায় মজলিসে যোগ দিতে আসিয়াছেন। শাহজাদাকে হত্যা করিয়া পিশাচী নিজে আত্মহত্যা করিল। সব শেষ হইয়া গেল। হকিম আসিল, পরীক্ষা করিয়া বলিল “ছুরিকা বিষাক্ত, মরণের অধিক বিলম্ব নাই।” শাহজাদাও তাহা বুঝিতে

৩৮