প্রতীক্ষায়।
পারিতেছিলেন। আমার কোলে মাথা রাখিয়া বলিলেন, “ভয় নাই, আমি শীঘ্রই ফিরিয়া আসিব।” সেই রাত্রিতেই পরিচারকগণ প্রাঙ্গণে তাঁহাদের মৃতদেহ কবর দিল।
“তাহার পর একে একে বন্ধুবান্ধব, পরিচারক পরিচারিক সকলেই আমাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া গেল। শাহজাদার মৃত্যুর সহিত সরকারের তন্খা বন্ধ হইয়া গেল। ক্রমে প্রাসাদ বনে ভরিয়া গেল। বাবুজি, এই বিশাল পুরী সুসজ্জিত করিয়া রাখা আমার সাধ্যাতীত। তাহার পর হইতে প্রতিদিন রাত্রিতে এই স্থানে সেই হত্যা-কাণ্ডের অভিনয় হইয়া থাকে। তুমি যাহা দেখিয়াছ তাহা সম্পূর্ণ সত্য, স্বপ্ন বা মিথা নহে। অতৃপ্ত প্রেতাত্মাগুলি জীবনের শেষ রজনীর ঘটনা এখনও প্রতিদিন অভিনয় করিয়া থাকে। সেই ভয়ে মানুষ এ পথে আসে না। কেবল আব্দুল্লা আমাকে পরিত্যাগ করে নাই, সে ছিল বলিয়াই এতদিন বাঁচিয়া আছি, তাহারই সাহায্যে এই বিশাল প্রাসাদের এককোণে এতকাল বাস করিতেছি। শয়তান ও জিনের আবাস বলিয়া এই দেশের লোকে কেহ এই স্থানের নিকটেও আসেনা। এই স্থানের দশক্রোশের মধ্যে লোকালয় নাই। যাহারা ছিল তাহারা সকলে মরিয়া গিয়াছে বলিয়া ভয়ে নুতন লোক বাস করিতে আসেনা। প্রাসাদের চারিদিক অরণ্যসস্কুল হইয়া উঠিয়াছে।
“আমি যাই নাই কেন জিজ্ঞাসা করিতেছ? আমি যে তাঁহার গৃহে বাস করিতেছি। ইহার প্রত্যেক পাষাণ-খণ্ড আমার হৃৎপিণ্ডের ন্যায় প্রিয়। বাবুজি, শাহজাদা গোলাম আলিকে কেহ কখনও মিথা বলিতে শুনে নাই। তিনি বলিয়া গিয়াছেন আবার আসিবেন, সুতরাং তিনি নিশ্চয়ই আসিবেন; আমি তাঁহার প্রতীক্ষায় রহিয়াছি।”